চট্টগ্রামে গান গেয়ে এক যুবককে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যায় সম্পৃক্ত ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’র তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন—ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী ওরফে জুয়েল (৪২), মো. সালমান (১৬) ও আনিসুর রহমান ইফাত (১৯)।
পাঁচলাইশ থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বদনাশাহ মাজারের পাশে রাস্তার সামনে থেকে এক অজ্ঞাত যুবককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে অজ্ঞাত ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত করে পুলিশ। তার নাম মো. শাহাদাত হোসেন (২৪)। পরদিন ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা থানায় এসে মামলা করেন।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া এক ভিডিও দেখে এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর সেই ভিডিও দেখে শাহাদাতকে শনাক্ত করেন তার স্ত্রী।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, এক যুবককে ছিনতাইকারী সন্দেহে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক পিঠানো হচ্ছে। এসময় কয়েকজন যুবক গান গেয়ে গেয়ে ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারছিল তাকে।
পরে জানা গেছে, এটি ১৩ আগস্ট রাত ১০টা থেকে দেড়টার মধ্যকার ঘটনা। নগরীর পাঁচলাইশ থানার ২ নম্বর গেট এলাকায় এক যুবককে ছিনতাইকারী সন্দেহে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারার পর বদনাশাহ মাজার এলাকায় লাশ ফেলে দেওয়া হয়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ শনাক্ত করা হয়। সেই সূত্র ধরে গ্রুপটির অ্যাডমিন ও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী ওরফে জুয়েলকে (৪২) শনাক্ত করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে ২ নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যান এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভিডিওতে শাহাদাতের গাল চেপে ধরে ব্যঙ্গাত্মকভাবে ‘এ ভাইয়া সবাই একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান’ বলা যুবককে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তার আসামির তথ্যে চকবাজার থানার শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মো. সালমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার উভয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একইদিন রাত ৯টার দিকে ২ নম্বর গেট মসজিদ গলি থেকে আনিসুর রহমান ইফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা হত্যাকাণ্ডের যাবতীয় বিবরণসহ নিজেদের সক্রিয় থাকার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ ফয়সাল আহম্মেদ।
মৃত মো. শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভূঁইয়াবাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। থাকতেন নগরীর কোতোয়ালী থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। তিনি নগরীর ফলমণ্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন।
আরএস/ডিজে