গাইনির চিকিৎসক দিয়ে হাঁড়ভাঙার চিকিৎসা চলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে

অর্থোপেডিকসের (হাঁড়ভাঙা) চিকিৎসা দেন গাইনি চিকিৎসক! চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহিঃবিভাগেই চলছে এই চিকিৎসা। এই বিভাগে রোগী এলেই গণহারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ওয়ার্ডে। এই বিভাগ থেকে গাইনি চিকিৎসক বদলি করার পর আবারও পদায়ন করা হয়েছে গাইনি চিকিৎসক।

জানা গেছে, এই হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বহিঃবিভাগে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু অর্থোপেডিকস বহিঃবিভাগে কর্মরত আছেন গাইনি চিকিৎসক ডা. খাদিজা বেগম।

একই বহিঃবিভাগে দীর্ঘদিনের শূন্য পদে আরএস (রেসিডেন্ট সার্জন) বা আবাসিক সার্জন হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে গাইনি চিকিৎসক ডা. লুৎফন নাহার ইলাকে।

জানা গেছে, তিনি ঢাকা মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে মেডিকেল অফিসার ছিলেন। সম্প্রতি ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়ে চমেক হাসপাতালে অর্থোপেডিকস বহিঃবিভাগে যোগ দিয়েছেন।

এদিকে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড থেকে যে একজন চিকিৎসক রোস্টার ভিত্তিতে এসে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে রোগী দেখেন। দেড়শ থেকে দুইশ রোগী দেখতে হিমসিম খাচ্ছেন এই একজন চিকিৎসক। আর এ চাপের কারণে ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

আবার বহিঃবিভাগে সুচিকিৎসা না মেলায় অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় বেশি থাকছে। ওয়ার্ডের বেড, মেঝে ছাপিয়ে বাইরের মেঝেতেও রোগী ভর্তি আছে।

অর্থোপেডিকসের বহিঃবিভাগে দীর্ঘদিন আবাসিক সার্জন পদ শূন্য ছিল। গত ৩১ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রজ্ঞাপনে জানা গেছে, ডা. লুৎফুন নাহার ইলা ওএসডি (অতিরিক্ত) কর্মকর্তা ছিলেন। তাকে সেখান থেকে বদলী করা হয়েছে আবাসিক সার্জন (অর্থোপেডিকস এন্ড ট্রমাটোলজি) হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি গাইনি চিকিৎসক।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পশ্চিম পাশে বহিঃবিভাগ ভবনের দোতলায় অর্থোপেডিকস কর্নার। প্রতিদিন সেথানে ১০০ থেকে ১৫০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক সময় রোগীর সংখ্যা ২০০ পার হয়ে যায়।

অর্থোপেডিকস বহিঃবিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে আছেন গাইনি চিকিৎসক ডা. খাদিজা বেগম। তিনি চমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে আইএমও বা ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু তাকে দিয়ে চিকিৎসা সেবার ছিটেফোঁটা ও পায়না রোগীরা। বাধ্য হয়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তে অর্থোপেডিকস বহিঃবিভাগে ওয়ার্ড থেকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সহকারী রেজিস্ট্রার, আইএমও বা ইনডোর মেডিকেল অফিসার পদবীর একজন চিকিৎসক রোস্টার (পালাক্রম) ভিত্তিতে রোগী দেখে থাকেন।

এদিকে ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল চিকিৎসকদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে রোগীর ভিড় এতটাই যে, ওয়ার্ডের সীট, মেঝে ছাড়িয়ে বাইরে বারান্দায় রোগী ভর্তি থাকে। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের। সেখান থেকে চিকিৎসক এসে যখন বহিঃবিভাগে রোগী দেখেন ওয়ার্ডে তখন চিকিৎসক সংকট তৈরী হয়।

অন্যদিকে ওয়ার্ডে সকালের রাউন্ড শেষে বহিঃবিভাগে চিকিৎসকদের আসতে অনেক সময় হয়ে যায় সকাল ১১টা। সেই সময় রোগীর জট লেগে যায় অর্থোপেডিকসের বহিঃবিভাগে।

আব্দুল হান্নান (৩৮)। বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায়। থাকেন চট্টগ্রাম শহরেই। করেন রাজমিস্ত্রির কাজ। কাজ করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙ্গে ফেলেন। হান্নান বলেন, ‘আমি বহিঃবিভাগে ভাঙ্গা হাত দেখাতে এসেছিলাম যাতে এখানেই ভালো চিকিৎসা পাই। ওয়ার্ডে ভর্তি হলে ঝামেলা। খরচও অনেক বেশি। কাছে থাকার লোক নেই। কিন্তু অর্থোপেডিকসের বহিঃবিভাগে ভালোভাবে আমার হাত না দেখেই ওয়ার্ডে ভর্তি করানোর জন্য স্লিপ ধরিয়ে দেন।’

মঙ্গলবার (৭ জুন) দুপুরে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেলো আব্দুর হান্নান ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। কারণ ওয়ার্ড বয়রা তার হাতটি ড্রেসিং করতে গিয়ে আরেক দফা মোচড় দিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাকে আবারও এক্সরে করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে বহিঃবিভাগের চিকিৎসক ডা. খাদিজা বেগমের ফোনে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।

চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব কুমার পালিত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আইএমই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!