‘গণ্ডগোল শংকায়’ এবার প্রার্থী বাছাই চেয়ারম্যানের ঘরে, ক্ষোভে ফুঁসছে নেতাকর্মীরা

সন্দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন

‘গণ্ডগোলের আশংকায়’ সন্দ্বীপের ১১ ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাগুলো উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ১১ এপ্রিল সন্দ্বীপের ১২ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহনের কথা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু মাত্র হরিশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা নিজেদের ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হবে।

৬ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত ৩ দিনে ধারাবাহিকভাবে একইস্থানে এসব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা অনুষ্ঠিত হবে। জোর করে শিডিউল মিলাতে গিয়ে প্রার্থী মনোনয়নের তালিকা প্রস্তুতের মত গুরুত্বপূর্ণ এসব সভার অনেকগুলোর ক্ষেত্রে একটি ইউনিয়নের সভা শুরুর মাত্র ১ ঘণ্টার ব্যবধানে আরেকটি সভার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে তড়িঘড়ি করে সেসব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শুক্রবার(৫ মার্চ) সকালে ১২ ইউনিয়নের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধদ্বার সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত নেতাদের বেশিরভাগের আপত্তির মধ্যে সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার আগ্রহে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার জন্য এই ধরনের হঠকারী একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতীতেও উপজেলা কমপ্লেক্সে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভাকে ঘিরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের ছেলে পেলেদের জড়ো করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে আওয়ামী লীগ নেতাদের জিম্মি করে এমপি মহোদয় উনার মন মত সিদ্ধান্ত আদায় করে নিয়েছেন। এবারও তাই হবে।

সভায় উপস্থিত থাকা নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সভায় ১২ ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মামুন ছাড়া বাকি ২৩ জন উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ২৩ জনের মধ্যে ২০ জন নিজ নিজ ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করে তালিকা প্রস্তুত করার পক্ষে মত দিলেও সারিকাইত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শিবলী, মগধরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সমীর, সন্তোষপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন জাফর ও বাউরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সংঘাতের আশংকার কথা জানিয়ে সব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা উপজেলা কমপ্লেক্সে একই জায়গায় করার প্রস্তাব রেখে বক্তব্য দেন। এই ৪জনই স্থানীয় সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার অনুসারি। এসময় সাংসদ মিতাও তাদের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন।

তবে সভায় উপস্থিত অন্য ২০ জন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ ইউনিয়নে মতবিনিময় সভা করার পক্ষে মত দিলে এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সভা ত্যাগ করতে উদ্যত হন সাংসদ মিতা। পরে সাংসদের দাবি মেনে নিয়ে ৩ দিনে ১১ ইউনিয়নের বর্ধিত সভা উপজেলা কমপ্লেক্সস্থ উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এই সিদ্ধান্ত খুবই অরাজনৈতিক ও অসম্মানজনক একটি সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করে একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘দল ১২ বছর ক্ষমতায়। এখন যদি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভা নিজ নিজ এলাকায় করা না যায় সেই পরিবেশ যদি না থাকে তো এটাতো আমাদের সবার জন্য লজ্জার। এটি কোনভাবেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না।’

এসব বিষয়ে কথা বলতে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শাহজাহান বিএর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত কোন ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নেই। সেজন্যই আমরা এই সিদ্ধামত নিয়েছি। শুধু হরিশপুরের সভাটা তাদের এলাকায় হবে বাকি ১১ ইউনিয়নের সভা উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে হবে।’

হরিশপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে মিশন না সূচক উত্তর দেন। তাছাড়া দলীয় কার্যালয় না থাকাতেই যদি সভা ইউনিয়নে করতে বাধা হয়ে থাকে তাহলে সভাগুলো উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে না করে কেন উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে করা হচ্ছে এই প্রশ্নেরও কোন সদুত্তর মেলেনি।

তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের জিম্মি করে সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার আশংকার কথাও নাকচ করে দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক। এসব বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, দেশের ৩৭১ ইউনিয়নে প্রথম ধাপে আগামী ১১ এপ্রিল ভোট গ্রহনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম জেলায় শুধু সন্দ্বীপের ১২ ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য দলটির ইউনিয়ন কমিটির বর্ধিত সভা করে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর সহ সভার একটি রেজুলেশন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলে পাঠানোর কথা উল্লেখ রয়েছে দলটির ঘোষণাপত্রে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!