গণহত্যা মামলায় আইসিজের রায়ে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যা মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় অন্তবর্তীকালীন ৪টি আদেশ দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস (আইসিজে)। প্রথম ধাপের এ রায়ে স্বস্তি ফিরেছে বাংলাদেশের কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে।

‘আইসিজে’ মামলার অন্তবর্তীকালীন রায়ে স্বস্তিতে আনন্দ প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গারা। তাদের দাবিকৃত ৬টির মধ্যে ৪টি পক্ষে আসায় প্রথম জয়ের স্বাদ পেয়েছে বলে মনে করেন আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতারা। এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রোহিঙ্গারা সন্তষ্টিও প্রকাশ করেন। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে ও রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

রায়ের পর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পর বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজনও রোহিঙ্গারা। এ সময় গাম্বিয়া, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।

টেকনাফের নয়াপাড়া নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘আইসিজের দেওয়া রায় নিয়ে আমরা অনেক খুশি, এটি শুরু মাত্র। আমরা এই রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

গণহত্যা মামলায় আইসিজের রায়ে সন্তুষ্ট রোহিঙ্গারা 1

সাধারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের (২৪ লেদা) বাসিন্দা মো. ফরিদ জানান, এ রায়ে খুবই খুশি। বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক মহল যদি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায় তাহলে নিশ্চয় একসময় মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের সবগুলো দাবি মেনে নিতে বাধ্য হবে।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভেলপমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. আলম বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজের দেওয়া রায়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছে। এই রায়ে রোহিঙ্গা ও তাদের স্বজনদের হত্যার সুবিচার হবে।’

রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সৈয়দ উল্লাহ বলেন, ‘৬টি দাবির মধ্যে ৪টি আমাদের পক্ষে এসেছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে অং সান সু চির যুক্তি খারিজ করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে সেখানে গণহত্যা হয়েছে। এজন্য রায়ের দিন সু চি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এই থেকে সুচির লজ্জা পাওয়া উচিত। তবে প্রত্যাবাসনের বিষয় নিয়ে যদি আলোচনা করলে তাহলে আরো ভাল হতো।

এদিকে রায়ের দিন টেকনাফের কয়েকটি ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায় ছোট ছোট দোকানে টিভি ও রেডিওতে খবর দেখতে ব্যস্ত ছিল রোহিঙ্গারা। সে সময় ‘আইসিজে’ ঘোষিত রায়ের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন।

প্রসংগত, বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় অন্তবর্তীকালীন ৪টি আদেশ দিয়েছে আইসিজে। সেগুলো হলো রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে অং সান সু চির যুক্তি খারিজ, মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে, মিয়ানমারকে অবশ্যই ধ্বংসযজ্ঞ রোধ করতে হবে এবং প্রমাণ সংক্রান্ত বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমারকে ৪-৬ মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের উপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তারা রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!