খেলা নয় মেলায় মুখর স্টেডিয়াম

খেলার ইভেন্ট অনেক, মাঠ কিন্তু একটাই। ফলে এ মাঠকে ঘিরেই বছরজুড়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন জমিয়ে রাখে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস)। বিভিন্ন খেলার চাপে এক প্রকার শিডিউল ভেঙ্গে পড়ার দশা এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের।

চট্টগ্রাম ক্রীড়াপাড়ায় এই মাঠই যেন ভরসা। এ মাঠকে কেন্দ্র করেই ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, হকিসহ নানা পদের ইনডোর-আউটডোরের ক্ষুদে খেলোয়াড়রা অনুশীলন চালায়। অনুশীলনে নিজেদের ঝালাই করে নিতে পাশাপাশি ভরসা যোগায় এমএ আজিজ সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়াম এবং আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামের ছোট মাঠটি। তবে বারো পদের খেলার মাঠজুড়ে তেরো পদের মেলা যেন বাঁধ সাজে তাদের এই অনুশীলনে।

চট্টগ্রামের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই মাঠ সংকটের কারণে আকরাম, আফতাব আর তামিমের আদলে খেলোয়াড় উঠে আসছে না চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে। তার ওপর খেলার মাঠজুড়ে হরেকরকম মেলার আয়োজনে অনুশীলন আর উৎসাহে ভাটা পড়ছে ক্ষুদে খেলোয়াড়দের।

এ মাঠকে কেন্দ্র করে সারা বছরই চলছে মেলা। কখনো বৃক্ষমেলা, কখনো বইমেলা, কখনো বাণিজ্য মেলা, আবার কখনো গাড়ি মেলা। তার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয় ১৫ দিনব্যাপী সবুজ মেলা। সেই রেশ না কাটতেই একই মাঠে শুরু হয় মেট্রোপলিটন চেম্বারের মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা। চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে এই মেলা চলমান থাকায় আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয় ৬ দিন ব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগীয় বইমেলা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রখ্যাত এক ক্রীড়া প্রশিক্ষক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এসব অনিয়ম। বছরের অন্য সময়ে আর যাই হোক নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়টা হচ্ছে আমাদের খেলোয়াড় তৈরি করার সময়। এ সময় ক্ষুদে প্রশিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজের পড়ার চাপ কম থাকে। পাশাপাশি এ সময়ে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা পরবর্তী বছরের বিভিন্ন টুর্নামেন্টের জন্য প্রতিভাবান খেলোয়াড় সৃষ্টির কাজ চালায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের এ সময়ই চলছে মেলা। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে জন্য বরাবরই উর্বর ভূমি চট্টগ্রাম।’

তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জানান,‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেকই আমরা এসব মেলার আয়োজন করি। এখানে কারো ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোন মেলা হয় না। এছাড়াও আমি সিজেকেএসের সভাপতি এবং সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। খেলোয়াড় তৈরিতে অসুবিধা না হওয়ার জন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করেছি। কাজেই এই মাঠে খেলাও চলবে মেলাও চলবে।’

তবে এ ব্যাপারে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ইঞ্জিনিয়ার এম আলী আশরাফ বলেন, ‘খেলার মাঠে মেলার আয়োজন ঠিক নয়— এ কথা সত্যি। তবে বাঙ্গালীর কৃষ্টি, সংস্কৃতি তুলে ধরতে মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। আর বই মেলা তো তারুণ্যর মনের খোরাক মেটায়। তবে একটি আধুনিক নগরে মেলা এবং খেলার মাঠের জন্য ভিন্ন ভিন্ন স্থান থাকা উচিত। শহরের প্রান্তসীমায় মেলার জন্য স্থায়ী স্টলসহ নির্দিষ্ট স্থান থাকা উচিত।’

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!