খুলে দিতেই পতেঙ্গা সৈকতে হামলে পড়ছে মানুষ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই

মাস্ক না পরেই পরিবার নিয়ে মুরাদপুর থেকে পতেঙ্গা সৈকতে ঘুরতে আসেন মো. হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বললেন, ‘বাচ্চারা তো আসলে মাস্ক পরতেই চায় না। যেহেতু ঘুরতে এসেছি, সেহেতু জোর করছি না মাস্ক পরতে। তাছাড়া এটি খোলামেলা পরিবেশ। তাই আমি নিজেও মাস্ক পড়িনি। তবে প্রত্যেকেরই উচিত মাস্ক পরা।’

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ঘুরে দেখা যায়, দুপুরের পরই বাড়তে থাকে পর্যটকদের ভিড়। বেশিরভাগ পর্যটকের মুখে নেই মাস্ক, মানছে না সামাজিক দূরত্ব। পর্যটকদের সুরক্ষা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স থাকলেও সৈকত ঘুরে দেখা মেলেনি কোন পুলিশ সদস্যের। এছাড়া নির্দিষ্ট ফুড কর্নারগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে দর্শনার্থীদের খাওয়া-দাওয়া করতে দেখা গেছে।

প্রায় ৫ মাস পর গত ২২ আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রগুলো শর্তসাপেক্ষে উন্মুক্ত করে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের পরপরই প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ভিড় জমায় পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা। কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব না মেনেই প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন চট্টগ্রামের অন্যতম উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে।

খুলে দিতেই পতেঙ্গা সৈকতে হামলে পড়ছে মানুষ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই 1

আল আমিন খান নামে এক ছাত্রের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক সেটা জানা আছে। কুমিল্লা থেকে এখানে ঘুরতে এসেছি। একটু আগেই দুপুরের খাবার খেলাম। তাই মাস্ক আপাতত পকেটে ঢুকিয়ে রেখেছি। অল্প সময়ের জন্য মাস্ক খুললে কি করোনা হয়ে যাবে?’

মাস্ক ব্যবহার করার জন্যে পর্যটকদের প্রতিদিনই আহ্বান করা হচ্ছে জানিয়ে পতেঙ্গা থানা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই প্রদীপ দত্ত বলেন, ‘সৈকতে এখন মোটামুটি লোকজন কম আসছে খারাপ আবহাওয়ার কারণে। তবুও যারা আসছে তাদের আমরা মাস্ক পরার জন্য এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঘোরার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। হোটেল ব্যবসায়ীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাবার পরিবেশন এবং কাষ্টমারদের সেবা দেওয়ার জন্য নিয়মিত তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।’

বিনোদনকেন্দ্রে আসা দর্শনার্থীদের জন্য জেলা প্রশাসনের ১৬ শর্তের মধ্যে রয়েছে— পার্কের প্রবেশপথে জীবাণুমুক্ত ট্যানেল স্থাপন, থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা, পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রবেশ পথে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের জন্য এক মিটার পরপর মার্কিং লাইন করা, পার্কে ময়লা ফেলার পাত্র এবং স্যানিটাইজার অথবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা, পার্ক খোলার আগে ও পরে এবং মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন রাইড, শৌচাগার জীবাণুমুক্ত করা, দর্শনার্থীরা শৌচাগার ব্যবহারের পর দরজার হাতল, বেসিন জীবাণুমুক্ত করা, রাইডে দর্শনার্থীদের এক আসন পরপর বসানো এবং যেসব রাইডে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে না সেগুলো বন্ধ রাখা, পার্কের প্রবেশপথ ও রাইডের কাছে তিনজনের বেশি জনসমাগম করতে না দেওয়া, স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা কাপড় পরিধান নিশ্চিত করা, পার্কের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত বোর্ড, লিফলেট বিতরণ করা এবং ফুড কর্নারে বসে খাওয়া-দাওয়া না করা।

পতেঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জোবায়ের সৈয়দ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সৈকতে আসা দর্শনার্থীদের সচেতন করতে আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশের মাধ্যমে নিয়মিত মাইকিং করছি এবং তাদের অনুরোধ করছি স্বাস্থ্যবিধি মানতে। নিজ থেকে সবাই সচেতন না হলে আসলে স্বাস্থ্যবিধি মানাটা কঠিন হয়ে পড়বে।’

রবিউল/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!