খুন হয়ে নেতা পাল্টানোর মাশুল গুণতে হল তানভীরকে

চট্টগ্রামের দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোর্শেদ আকতার চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন আনোয়ার জাহেদ তানভীর। মাঝে কিছুদিনের জন্য গ্রুপ বদলে দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ইসমাইলের বলয়ে ভিড়েন। তবে নির্বাচনের আগে আগে আবার ফিরে আসেন পুরনো ঠিকানা— মোর্শেদ বলয়ে। এটাই কাল হল তানভীরের। এই ফিরে আসা মানতে পারেনি অধ্যাপক ইসমাইলের অনুসারীরা। একের পর এক হুমকি আসতে থাকে তানভীরের ওপর। শেষমেশ নেতা পাল্টানোর মাশুল গুণতে হল তানভীরকে— খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান অধ্যাপক ইসমাইল। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে মোরশেদ। এতে দুই নেতার দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠে। এই দ্বন্দ্বের বলি হন আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুই নেতাই দায় চাপিয়েছেন পরস্পরের উপর। তবে দুই জনই স্বীকার করেছেন তানভীর তাদের উভয়েরই রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল।

এ বিষয়ে মোর্শেদ আকতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তানভীর খুব নিবেদিতপ্রাণ রাজনৈতিক কর্মী ছিল। সে বঙ্গবন্ধু ল টেম্পলের ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস। পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিল তানভীর। মাসদুয়েক আগেও অধ্যাপক ইসমাইলের সাথে তানভীরের যোগাযোগ ছিল। পরে সে আমার নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়ায় তার প্রতি ক্ষোভ ছিল অধ্যাপক ইসমাইল ও তার অনুসারীদের। তারা তানভীরকে দেখে নিবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।’

মোরশেদ আরও বলেন, ‘আমার বাড়িতে ঢুকে তারা হামলা করেছে। তাদের এই স্পর্ধা হয় কী করে? তাদের উদ্দেশ্যই ছিল তানভীরকে খুন করা। আমার বাড়ির মধ্যে নির্বাচনী কার্যালয়ে প্রবেশ করে তারা হামলা করে তানভীরের উপর।’

অধ্যাপক ইসমাইলের নেতৃত্বে নির্বাচনকে ঘিরে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হচ্ছিল দাবি করে মোর্শেদ আকতার চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনের শুরু থেকেই তারা বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিল আমার নেতাকর্মীদের। অধ্যাপক ইসমাইলের অনুসারী সোহেলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছিল তারা। আমার নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানারও নিয়মিত ছিড়ে ফেলছিল অধ্যাপক ইসমাইলের অনুসারীরা। তানভীরকে মারার আগের দিন লিটন নামে আমার এক সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। এসব নিয়ে আমি থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। সবাই শুনেছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের কাছে এরকম কোন অভিযোগ আসেনি। আমি এসব বিষয়ে জানতাম না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীরকে বহিরাগত দাবি করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য মোর্শেদকে দায়ী করেন অধ্যাপক ইসমাইল। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘তানভীর আমার কাছে আসতো এটা সত্য। কিন্তু সে নিজে তিন-চারটা হত্যামামলার আসামি। আমি তো সন্ত্রাস পালি না। তানভীর আমার কাছে আসতো। কিন্তু আমি তাকে জায়গা দিতাম না। আমার কাছে ঘেঁষতে না পেরে সে নির্বাচনের আগে আগে ওদিকে চলে গেছে। তানভীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটারও না। সে বহিরাগত। আমাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী ঘোষণা করার পর থেকেই মোর্শেদ তেলেবেগুনে জ্বলছেন। উনি টোকাইদের দিয়ে আমার পোস্টার-ব্যানার খুলে ফেলছেন। আমার কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। এসবই আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

তানভীর খুনের ঘটনার বিষয়ে অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে আমি আমার নির্বাচনী কার্যালয়ে এসে শুনি ৪ জন টোকাই মিলে আমার পোস্টার ব্যানার ছিঁড়ছে। তাদের স্থানীয়রা ধরে ফেলে। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এর খানিক পরে শুনি মোর্শেদের ভাই আর তানভীরের নেতৃত্বে আমার কর্মীদের ধাওয়া করা হয়েছে। সেখানে ছুরি মারামারির ঘটনাও হয়েছে। আমি এসবের কিছুই জানি না। অথচ আজকেও (বৃহষ্পতিবার) আমার বাসার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একদল লোক আমার নাম ধরে আক্রমণাত্মক শ্লোগান দেয়।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী এলাকায় বুধবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় তানভীরকে।

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!