খুনের ২ ঘন্টা আগে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় পটিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ীর

মায়ের কাছে মামার বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছের কথা বলছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধর। সেদিন রাতে চট্টগ্রাম শহরের দোকানে বসে মামার ফোন পেয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ দেখান বিমান। আর সেই আবদার মাকে ও নির্মম মৃত্যুর প্রায় দুই ঘন্টা আগে মোবাইল ফোনে মা মাধুরী ধরকে জানান।

পটিয়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতেই তার গ্রামের বাড়ি ধলঘাট ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়াডের বনিক পাড়ায় সম্পন্ন হয়েছে।

ঘটনার রহস্য উদঘাটনে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা, পিবিআই, র‍্যাবসহ পটিয়া থানার একাধিক টিম কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম।

এছাড়াও ঘটনাটির সার্বিক বিষয় সরাসরি মাঠ পর্যায়ে থেকে মনিটরিং করছেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে বিমান ধর যে মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে ফিরছিলেন সেই গাড়ি থেকে পুলিশ কিছু সামগ্রী আলামত হিসেবে জব্দ করেছে। তাদের মধ্যে মোটরসাইকেল, ব্যাগ, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র (দা), হেলমেট, মোবাইল ফোন, সান গ্লাস সহ বিমান ধরের পরনে ও সাথে থাকা আরও কিছু সামগ্রী ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে স্বর্ণ ব্যবসায়ী বিমান ধরের (৪২) জবাই করা রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পটিয়া থানা পুলিশ। এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন নিহতের স্বজনরা।

Yakub Group

নিহতের ভাই রিমন ধর বলেন, তার বড় ভাই প্রতিদিন নিজের মোটরসাইকেলযোগে চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানাধীন রাহাত্তার পুল এলাকায় সৌদিয়া গোল্ড ফ্যাশন নামক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সকালে যেতেন। আর রাত এগারোটা-বারোটার মধ্যে গ্রামের বাড়িতে ফিরতেন। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার রাতেও আমার ভাই শহর থেকে বাড়িতে ফেরার পথেই আমাদের বাড়ির অদূরে তাকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জবাই করে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

নিহতের স্ত্রী প্রিয়াংকা ধর বলেন, সর্বশেষ সেদিন মঙ্গলবার রাত নয়টা ৪০ মিনিটের দিকে আমার শাশুড়ির মোবাইল ফোনে কথা হয় বিমান ধরের।

এ সময় মা ছেলের মধ্যে ফোনে কী কথা হয়েছে— এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিমল ধরের মা মাধুরী ধর জানান, সেদিন রাতে দোকান বন্ধ করার আগে আমাকে ফোন দিয়ে বিমান ধর বলেন, তার মামা ফোন দিয়ে বলেছেন ঠাকুরদিকে (নানি) নানার বাড়ি কক্সবাজার থেকে নিয়ে আসতে। এ সময় বিমান আমাকে বলেন, মা নানার বাড়ি গেছি অনেক দেরি হয়েছে— এ সুবাদে গিয়ে ঘুরে এসে আসার সময় ঠাকুরদিকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসব। তখন আমি বিমানকে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আগে তুই বাড়ি আয়, তারপর বসে কথা বলব সবাই একসাথে। তখন আমাকে বিমান বলল মা আমি দোকান বন্ধ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি বাড়িতে।

কিন্তু কে জানত মায়ের কাছে বড়ছেলের জীবিত ফেরা আর হবে না, ফিরবেন লাশ হয়ে। তাও এরকম নিষ্ঠুরতম হত্যার মধ্য দিয়ে।

বিমান ধরের বয়োবৃদ্ধ বাবা দুলাল ধর জানান, প্রতিদিন আমার রাতে ছেলে বিমান ধর বাড়িতে এসে গেইটে মোটরসাইকেলের হর্ন দিতেন। তখন সে হর্নের শব্দ তার ঘুম ভেঙে যেত ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে জেনে তখন সারারাত ঘুমাতেন নিশ্চিন্তে। আর এখন চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। বড় ছেলেকে অকালে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে বৃদ্ধ স্বামী স্ত্রী দুইজনেই। তারা শুধু বলতে থাকেন আমার ছেলের কোন শত্রু নেই। শুধুমাত্র তার রাহাত্তারপুল এলাকার দোকানের পাশের দোকানি বাঁশখালীর লোকটা বেশ জালাতন করতেন বিমান ধরকে। আমরা মনে করেছি তার পরিকল্পনাতে এ হত্যাটি করেছে। তারা এমন সুপরিকল্পিত ভাবে গ্রামের বাড়ীতে আসার পথে বাড়ির অদুরে আমার ছেলেকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। যেন বুঝতে পারে নিজের এলাকার লোকজন হত্যা করেছেন।

এদিকে, বিমান ধরের মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ, র‍্যাব, পিবিআই, ডিবিসহ চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জাহাঙ্গীর আলম, পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান, পরিদর্শক ওসি (তদন্ত) রাশেদুল ইসলাম, পিবিআইয়ের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ ব্যাপারে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!