পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম প্রায় ১০০ টাকা করে কমলেও খুচরা বাজারে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। চাহিদা অনুযায়ী মজুদ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলেও কোন কারণ ছাড়াই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চালের দাম। ভোক্তারা বলছেন রমজান এলেই একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী পরিকল্পিতভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
সোমবার (২২ এপ্রিল) বিকেলে পাহাড়তলী বাজারে চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রমজানের কোন প্রভাব বাজারমূল্যে নেই। একসপ্তাহ আগের চেয়েও কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের চাল।
পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স বেলাল স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী বেলাল হোসেন বলেন, ৫০ কেজি ওজনের গুটি স্বর্ণা চাল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি এক হাজার ৩৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৪২০ টাকা। এছাড়া স্বর্ণা-৫ প্রতি বস্তা এক হাজার ৫০০ টাকা, জিরা সিদ্ধ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩৪০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এর মূল্য ছিল দুই হাজার ২০০ টাকা। আশুগঞ্জের বালাম প্রতি বস্তা এক হাজার ৬৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
বেলাল হোসেন বলেন, রমজানে পাইকারি বাজারে চালের চাহিদা কম থাকে। প্রতি বছর রমজানে চালের দাম বাড়লেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দশ দিন আগে সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমেছে। রমজানে বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বাজারে কেন চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই।
পাহাড়তলী বাজারের এয়াকুব আলী ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকার চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণত চাল কেনার ঘোষণা আসলে বাজারে চালের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এই বছরে চালের প্রচুর যোগান রয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো । বাজারে দাম বাড়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তার দোকানেও প্রকারভেদে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে যখন চালের দাম কমে গেছে সেখানে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে পরিস্থিতি ভিন্ন । বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন কোন কোন বিক্রেতা।
নগরীর মোমিন রোড়ের একাধিক খুচরা দোকানে গিয়ে দেখা যায়, গুটি স্বর্ণা চাল বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই চাল বিক্রি হয়েছিলো এক হাজার ৪০০ টাকা। এই চালে বস্তাপ্রতি বাড়ানো হয়েছে ৩৫০ টাকা। পাইকারি বাজারে এই চালের মূল্য এক হাজার ৩৮০ টাকা। পাইকারি বাজারের বস্তাপ্রতি চালের সাথে খুচরা বাজারের ব্যবধান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ।
মোমিন রোড়ের খুচরা ব্যবসায়ী হক স্টোরের বিক্রয় কর্মী মোহাম্মদ আলম বলেন, সিদ্ধ এবং আতপ চালে বস্তাপ্রতি দেড় থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও চালের দাম বেড়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, পরিবহন ব্যয়সহ রোজায় নানামুখী ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে নতুন চালও বাজারে চলে আসার সময় হয়েছে। সেজন্য চাহিদার কোন ঘাটতি নেই। ইতিমধ্যে সরকার ৩৬ টাকা দরে চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে। তার আগেই বাজারে নতুন চাল চলে আসবে।
ক্যাব চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহবায়ক শাহাদাত হোসেন বলেন, রমজান এলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। অহেতুক পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এদের দৌরাত্ম্য কমাতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।