খুঁড়িয়ে চলা কাস্টমস রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ঘুষে মেলে গতি
রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাসায়নিক পরীক্ষাগার চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একদিকে অর্ধশতাব্দীর পুরোনো যন্ত্রপাতিতে পরীক্ষা এবং অন্যদিকে নামমাত্র লোকজন দিয়ে পরিচালিত এই পরীক্ষাগারটি পরিণত হয়েছে ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দারে।
চোরাচালান প্রতিরোধ, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি বন্ধসহ রাজস্ব খাতের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন আস্থা হারাচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের কাছে। সেই সাথে এই প্রতিষ্ঠানটিতে পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়ার নেপথ্যে শোনা যায় ঘুষ লেনদেনের নানা অভিযোগও।
জানা গেছে, রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ২০০ নমুনা পরীক্ষাগারে আসে। জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিন ৫০টির বেশি নমুনা প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে জমে থাকা আমদানি পণ্যের নমুনার সংখ্যা।
একাধিক সিএন্ডএফ (ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট) প্রতিষ্ঠানের মালিক জানান, রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পণ্যের নমুনা জমা দিলে প্রতিবেদন পেতে সময়ক্ষেপণ হয়। ঘোষণা অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্য শতভাগ ঠিক থাকলেও প্রতিবেদন পেতে অনেক সময় সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও শিপিং এজেন্টের অতিরিক্ত চার্জ গুণতে হয় তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মকর্তা জানান, রাসায়নিক পরীক্ষাগারে স্পিড মানি দিলে পরের জমা দেওয়া নমুনার প্রতিবেদন আগে মেলে। নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন আগে-পরে পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে একটি দালালচক্র, যারা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের নিয়োগধারী কোন কর্মকর্তা না হয়েও যাবতীয় দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত থাকে। পরীক্ষাগারের প্রতিবেদন পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনে কর্মকর্তা এবং সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারাই সমন্বয় করে থাকে।
রাসায়নিক পরীক্ষাগারের নমুনা শাখায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন পণ্যের নমুনার স্তুপ। সেই স্তুপের পাশে বসেই কাজ করছেন কর্মকর্তারা।
পরীক্ষাগারে নমুনা দিতে আসা সিএন্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্পিড মানি (ঘুষ) দেওয়া ছাড়া প্রতিবেদন মেলে না পরীক্ষাগারে। তাদের অভিযোগের তীর পরীক্ষাগারের কেমিস্ট আবদুল হান্নানের দিকে। ওই প্রতিষ্ঠানের আরেকজন কেমিস্ট মনোয়ারা শিরীন আবদুল হান্নানের স্ত্রী। মূলত স্বামী-স্ত্রী মিলেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসা আমদানি পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে থাকেন।
পরীক্ষাগারের কেমিস্ট আবদুল হান্নান বলেন, ‘কাস্টম হাউজের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে প্রতিদিন দেড় থেকে ২০০ পণ্যের নমুনা পরীক্ষাগারে আসে। প্রয়োজনমতো জনবল না থাকায় প্রতিবেদন দিতে কিছুটা দেরি হয়। দীর্ঘদিন নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় লোকবল নিয়োগও হচ্ছে না।’ তবুও সময়মতো প্রতিবেদন প্রদানের চেষ্টা করেন বলে দাবি করেন তিনি।
প্রতিবেদন পেতে স্পিড মানির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য আনার কারণে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ার কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলতে পারে।’
তবে কাস্টমসের নিয়োগকৃত কর্মকর্তার বাইরে নমুনা শাখায় বহিরাগত দুজন কর্মী কাজ করে বলে স্বীকার করেছেন আবদুল হান্নান।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘কাজের ভলিউম অনুযায়ী রাসায়নিক পরীক্ষাগারের সক্ষমতা কিছুটা কম। সেই সাথে জনবল সংকটও আছে। নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত হয়ে লোকবল বাড়লে কাজে গতি আসবে।’
এসসি/এসএস/সিপি