খালি জায়গায় দোকান, ‘গুদামঘরে’ রূপ নিচ্ছে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স
পার্কিংয়ের জায়গা থেকে ছাদটুকুও বাদ নেই
চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকান। দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দোকান নির্মাণের কাজটি দিয়েছেন জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান শামীম করপোরেশনকে।
নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ষোলশহরে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নির্মিত চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের রূপ পরিবর্তন করে বর্তমানে সেখানে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দোকান নির্মিত হচ্ছে। শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ হচ্ছে দোকানগুলো।
শুধু তাই নয়, কমপ্লেক্সের সামনে ও পেছনে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখা স্থানেও নির্মাণ হচ্ছে দোকান। নিচে মহিলা টয়লেট ও জেনারেটর রুম সবকিছু ভেঙে দোকানগুলো তৈরি হচ্ছে। অথচ টয়লেট, জেনারেটর রুম ও পার্কিং স্থানে দোকান করার কোনো অনুমোদনও নেই। এদিকে শপিং কমপ্লেক্সের ছাদের ওপরে আরো এক তলা নির্মাণ করা হচ্ছে লোহার ফ্রেম ও অ্যাঙ্গেল বসিয়ে।
দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত জুন মাসে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ না করার জন্য মানববন্ধনও করেছে। চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৩৮০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। অবৈধ এ সব দোকান নির্মাণ বন্ধ না হলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানান, শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালকে নতুন নির্মানাধীন দুটি দোকান বরাদ্দ দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে তিনি আর আন্দোলনে নেই।
শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম বলেন, শপিং কমপ্লেক্সে আলো বাতাস আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এটি অনেকটা গুদামঘরে পরিণত হচ্ছে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী এমরান হোসেন বলেন, সামনে ও পেছনে পার্কিংয়ের জায়গাতে দোকান হচ্ছে। মানুষ পার্কিং বাড়ানোর চেষ্টা করে। অথচ এখানে উল্টো দোকান বানানো হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের কথা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘চসিক অনুমোদন দিয়েছে তাই নতুন দোকান নির্মাণ হচ্ছে। ফলে আমরা আন্দোলন করছি না।’
তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি দোকান পাওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের নতুন দোকানগুলো নির্মাণ করছে চসিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম করপোরেশন। এর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম নগরে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি এ কাজটি পেয়েছেন বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে চলমান প্রকল্প দোকান নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী শামসুদ্দোহা বলেন, ‘শপিং কমপ্লেক্সে নতুন দোকান নির্মাণের জন্য আমরা একটি প্রকল্প দিয়েছি। কিন্তু নিয়মবহির্ভূতভাবে কিছু করলে আমরা তা বন্ধ করে দেবো। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবো।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘পাশের বিপ্লব উদ্যানের ঠিকাদারকে আমরা শোকজ করেছি। কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। শপিংয়ের ক্ষেত্রেও তা হবে।’
চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সে নতুন দোকান নির্মাণ নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চসিকের প্রশাসক খোরশেদুল আলম সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নানা কাজে সময় হচ্ছে না। একদিন সারপ্রাইজ ভিজিটে দেখে আসবো। শপিং কমপ্লেক্সে অবৈধ কিছু পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত শপিং কমপ্লেক্সকে নষ্ট হতে দিতে পারি না।’
সিপি