শৈক্লাহ্ মারমার বাড়ির পাশেই বয়ে গেছে সুয়ালক খাল। বান্দরবান সদরের আমতলী মারমা পাড়ার প্রায় দেড়’শ পরিবারের নিত্যদিনের পানির চাহিদা মেটায় এই খাল। খালের পাড়েই ইট-সিমেন্টের তৈরি করা ঘাট সংযোগ ঘটিয়েছে পাহাড়ি জনপদে। তবে খরস্রোতা সেই খাল যেন বাধ সাধে এই মিতালীতে! বর্ষায় খালের খরস্রোতে ভেঙে যায় ঘাটটি। ফলে ভোগান্তি বাড়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর।
প্রতিবারের মত এবারের বর্ষায়ও খালে বয়ে যায় খরস্রোত। সেই স্রোত ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে গেছে আমতলী মারমা পাড়ায় সুয়ালক খালে উঠানামার ঘাটের সিঁড়ি। এতেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠে ঘাটটি। তবে ঘাটটিকে ব্যবহার উপযোগী করতে এলাকার স্থানীয়রা টুকে দিয়েছেন বাঁশ, কাঠ আর পেরেক।
বাঁশ আর কাঠের তালিজোড়া দেওয়া ভাঙ্গা ঘাট দিয়েই খালে নেমে এক কলসি পানি নিয়ে প্রশান্তির হাসি হেসে কল্যাণী মারমা বলেন, ‘ফানির হস্ত, তাহো ছাহো হস্ত অয়’- অর্থাৎ ‘পানির কষ্ট, এই ঘাটে উঠতে নামতে আরও বেশি কষ্ট হয়।’ তবে এই কষ্ট দীর্ঘদিনের। পানীয় জল, ধোয়ামোছা, গোসলসহ নিত্যকাজে গ্রামবাসী ব্যবহার করে ঘাটটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৭ বছর আগে এই ঘাটটি নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তখন ভালোই চলছিল। তবে এ বছর বর্ষায় প্রচন্ড খরস্রোতে খালের পাড়ের মাটি সরে যাওয়ায় ভেঙ্গে যায় ঘাটের চারটি পিলার। ভেঙ্গে যাওয়া সেই অর্ধেক অংশ মিলিয়ে যায় সেই খরস্রোতে। বাকি অংশ ঝুলে আছে খালের পাড়ে। তারা সেই অংশেই বাঁশ-কাঠ দিয়েই তৈরি করে নিয়েছে বাকি অর্ধেক ঘাট। আর সেটি ঝুঁকি নিয়েই ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা চিং মারমা জানান, প্রায় ১৩০টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। গ্রামবাসীর ব্যবহারের পানির উৎস এই সুয়ালেক খাল। অথচ দীর্ঘদিন ধরে খালটির ঘাট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকায় খুবই কষ্ট হচ্ছে নারী শিশু ও বয়স্কদের। যে কোনও সময় ঘাটটি ভেঙ্গে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
কথা হয় চিয়ন মারমা ও উলা মারমার (ছদ্মনাম) সাথে। তারা জানান, বুক কাঁপে এ ঘাটে পা ফেলতে। দু’একবার পা পিছলে পড়ে যাওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার। তবু প্রতিদিন এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে নিত্যদিনের ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করছে পাহাড়ি জনপদের বাসিন্দারা।
স্থানীয়রা বলছেন, এমনিতেই পাহাড়ি জনপদে রয়েছে সুপেয় জলের সংকট। নিত্যদিনের পানির চাহিদা মেটাতে কিছু নির্দিষ্ট উৎসের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ ব্যাপারে আমরা স্থানীয় মেম্বারকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় মেম্বার শৈক্যহ্লা মারমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয়রা আমাকে জানানোর পর আমি উপজেলা চেয়্যারম্যান বরাবর ঘাটটি সংস্কারের জন্য আবেদন করি। তবে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এখনও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।’
এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর উপজেলার চেয়্যারম্যান একেএম জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখনও এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে আমার কাছে কোনও আবেদন আসেনি।’
তবে স্থানীয় মেম্বারের পাঠানো আবেদনের প্রসঙ্গ টেনে আনতেই তিনি সুর পাল্টে বলেন,‘আমার পুরোপুরি মনে পড়ছে না, আবেদন পাঠানোর বিষয়টি দেখতে হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এই ঘাটটি নির্মাণ করেছিল পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড। তাই এক সংস্থার করা কাজের উপর অন্য সংস্থা কাজ করলে বিষয়টি দৃষ্টিকটু দেখায়।
তবে এখন এর সমাধান কী প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের মৌখিক বা লিখিত স্বীকৃতি পেলেই কাজটি করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের (স্থানীয় ও মেম্বার) পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি।
এএ/এসএ