ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সেন্ট্রাল প্লাজা মালিকের সই জাল—প্রতারণা মামলা খেল ব্যবসায়ী নেতা

মার্কেটের মালিকের স্বাক্ষর জাল করে গুদামঘর আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে খোদ মার্কেটের ব্যবসায়িক সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের ব্যবসায়িক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন মার্কেটটির একাংশের মালিক পানাউল্লাহ।

স্বাক্ষর জালিয়াতি,গুদাম দখলসহ প্রতারনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে অভিযুক্ত সভাপতি মোস্তাকের বিরুদ্ধে।

ঘটনার শুরু যেভাবে

জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের একাংশের মালিক মো.পানাউল্লাহ চৌধুরী। মার্কেটের তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় নিজেদের ৫০০ ফুট ও ৩০০ ফুটের দুটি দোকান রয়েছে পানাউল্লার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃতীয় তলার দোকানটি নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন এবং পঞ্চম তলার দোকানটি গুদাম হিসেবে ভাড়া দিতেন। হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত অফিসে আসতে পারেনি। ওই সময়ের মধ্যে সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরীর পঞ্চম তলার গুদামটি কিছু দিনের জন্য নিজের কাজে ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করলে পানাউল্লাহ চৌধুরী ব্যবহার করতে বলেন।

এরপর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী দোকানের স্বত্বাধিকারী পানাউল্লাহ চৌধুরীর স্বাক্ষর জাল করে গুদামটি মাসিক ১৯ হাজার টাকা ভাড়া মূল্যে একটি বহুজাতিক কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে গত তিন বছরে ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা অবৈধভাবে আয় করেন।

শুধু তাই নয়, গত তিন বছর অসুস্থতার কারণে পানাউল্লাহ চৌধুরী অফিসে না আসার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জোরপূর্বক তৃতীয় তলার অফিসটিও দখলে নিয়ে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী তার অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেখানে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দোকান মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের সভাপতি স্বাক্ষর জাল করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। পরবর্তীতে সভাপতি আমাদের কমিটির কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন এই কাজের জন্য। এই ঘটনায় সভাপতি মোস্তাকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।’

অন্যদিকে, নিজের উপর আরোপিত সব অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘না না, এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি, এগুলো মিথ্যা কথা। আর যার স্বাক্ষর জাল করার কথা বলা হচ্ছে সে আমার খুব কাছের আত্মীয়। ওদের সাথে কথা বলে আমি সব ঠিক করে ফেলেছি। কোনো ধরনের মামলা হয়নি।’

তবে নিজের উপর আরোপিত অভিযোগ মিথ্যা দাবী করলেও ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) এর তদন্ত রির্পোটে। এই রির্পোটেও মোস্তাকের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

এছাড়াও অভিযুক্ত মোস্তাকের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সুদের ব্যবসার অভিযোগ তুলেন ভুক্তভুগির পরিবারের সদস্যরা। শুধুমাত্র একটি ব্যাংকের একটি শাখাতেই মোস্তাকের নিজের নামে ও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ১৬টি একাউন্ট। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি সচল, কয়েকটা অচল। মুলত এসব নামী বেনামী একাউন্টগুলো দিয়েই বিদেশে টাকা পাচারসহ অনৈতিক কাজ করেন মোস্তাক, দাবী পানাউল্লার পরিবারের।

অভিযোগ রয়েছে, সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী সেন্ট্রাল প্লাজার মালিক পরিচয় দিয়ে দোকানদার, দোকানের ম্যানেজার ও ব্যবস্থাপকদের সাথে যোগসাজশে প্রকৃত দোকান মালিকের সাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে জাল চুক্তিপত্র,ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্র এবং ভাড়াটিয়া ভূয়া রশিদ তৈরি করে দোকান ভাড়া দিয়ে আসছিলেন।

ভুক্তভুগিরা কি বলছেন

পানাউল্লাহ চৌধুরীর ছেলে এরশাদ উল্লাহ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার বাবা এলাকার একজন প্রবীণ ব্যক্তি। আমার বাবা জিইসি সেন্ট্রাল প্লাজা মার্কেটের আংশিক একক মালিক। আমাদের তৃতীয় তলায় ৩০০ ফুটের একটি দোকান আর পঞ্চম তলায় ৫০০ ফুটের একটি গুদাম রয়েছে। তার মধ্যে তৃতীয় তলার দোকানটি আমার বাবা ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। আর পঞ্চম তলার গুদামটি ভাড়া দিয়ে দেওয়া হয়। হঠাৎ আমার বাবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অফিসে আসতে পারে নাই। ওই সময়ে সেন্ট্রাল প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী আমার বাবার কাছ থেকে পঞ্চম তলার গুদামটি কিছু দিনের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়া তাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোস্তাক পঞ্চম তলার গুদামটি সেন্ট্রাল প্লাজার দোকানদার, দোকানের ম্যানেজার ও ব্যবস্থাপকের সাথে যোগসাজশে বাবার স্বাক্ষর জাল করে মাসিক ১৯ হাজার টাকা ভাড়া মূল্যে অবৈধ চুক্তির মাধ্যমে এপেক্স কোম্পানিকে ভাড়া দিয়ে দেন। অপর দিকে তৃতীয় তলার দোকানটিও তিনি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে মোস্তাক আহাম্মদ চৌধুরী তার অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। সেখানে অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যান সে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর বাবা সুস্থ হয়ে সেখানে গেলে বাবা তার এমন কর্মকান্ড দেখে অবাক হয়ে যান। পরে এসবের কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো আমার ঘরের গেইটের সামনে ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে এসে আড্ডা দিয়ে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখানোর চেষ্টা করে। পরে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্ত সাপেক্ষে আমাদের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।’

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!