বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি দুটি ডায়াবেটিসের ওষুধে আমেরিকার ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ‘সম্ভাব্য ক্যান্সার উপাদান’ খুঁজে পাওয়ার পর ওষুধ দুটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস মেটফরমিন হাইড্রোক্লোরাইড এক্সটেন্ডেড রিলিজ (ইআর) ৫০০ মিলিগ্রাম ও ৭৫০ মিলিগ্রামের দুটি ট্যাবলেটজাতীয় ওষুধ ২০১৯ সালের জুনে উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করে। ওষুধ সরবরাহ করা হয় আমেরিকান কোম্পানি বেশোর ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে।
আমেরিকার ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বেক্সিমকোর রফতানি করা ওষুধ দুটি পরীক্ষা করে তাতে এন-নাইট্রোসোডিমেথালমিন — যা এনডিএমএ হিসেবে পরিচিত — তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ রাসায়নিক উপাদান ওষুধ দুটিতে ‘দৈনিক গ্রহণযোগ্য সীমার অতিরিক্ত রয়েছে’ বলে সরকারি মাননিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি শনাক্ত করেছে। এ কারণে ওষুধ দুটি ‘বাজার থেকে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ’ করে এফডিএ।
এনডিএমএ বা এন-নাইট্রোসোডিমেথালমিন মানুষের জন্য সম্ভাব্য কারসিনোজেন (যা মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে) হিসেবে চিহ্নিত। উপাদানটি পরিবেশদূষণকারী হিসেবেও পরিচিত।
এর উপস্থিতি আছে জানবার পর আমেরিকান কোম্পানি বেশোর ফার্মাসিউটিক্যাল আরও পরীক্ষা চালায় এবং তাতেও এনডিএমএ শনাক্ত করে। এ প্রেক্ষিতে আমেরিকান কোম্পানিটি দুটি লটের ওষুধই বাজার থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার (রিকল) ব্যাপারে সম্মত হয়।
এফডিএর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ডায়বেটিসের ট্যাবলেট থেকে কোনো ‘ক্ষতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে বেশোর বা বেক্সিমকো কেউই কোনো রিপোর্ট পায়নি।’
এ বছরের শুরুতে এফডিএ আরো ছয়টি আমেরিকান কম্পানির মেটফরমিন সম্বলিত ওষুধ বাজার থেকে ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করে।
বেক্সিমকো বেশোরের জন্য আরো বেশ কিছু ওষুধ প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কার্ভিডিলল এবং ন্যাডোলল, অ্যান্টিহিস্টামিন প্রজাতির ওষুধ, সিপ্রোহেপ্টাডিন এবং পেশী শিথিলকারী মেথোকারবামল।
২০২০ সালের ৪ মে বাংলাদেশ সরকারের ডিরেক্টর জেনারেল অফ ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকালস্ কে ভাইরাসনাশক ওষুধ রেমডেসিভির-৪ ইনজেকশন (‘বেমসিভির’ ব্র্যান্ড নামের অধীনে) উৎপাদনের জন্য জরুরি অনুমোদন দেয়। এতে বেক্সিমকো বিশ্বে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার জন্য রেমডেসিভির-এর জেনেরিক রূপ উৎপাদনকারী প্রথম কোম্পানি হবার সুযোগ পায়।
বাংলাদেশি এই ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার (এসআইআই) এর সাথেও একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে— যার অধীনে এসআইআই উদ্ভাবিত কোভিড-১৯এর যেকোন টিকা আমদানি ও বিপণনের একচ্ছত্র অধিকারপ্রাপ্ত হবে বেক্সিমকো। আস্ট্রাজেনেকা, গেইটস্ ফাউন্ডেশন এবং গ্যাভি ভ্যাকসিন এলায়েন্সের সাথে এসআইআই- এর পার্টনারশিপ রয়েছে, যার ফলে ভারতীয় এই কোম্পানি সমগ্র বিশ্বে সরবরাহের জন্য কোভিড-১৯ এর ১০০ কোটি টিকা উৎপাদন করবে।
এদিকে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘রোগীর নিরাপত্তাকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।’ ওষুধ প্রস্তুতকারক এই প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘আমাদের ওষুধ তৈরির সূত্রে বা প্রস্তুত প্রণালী থেকে এই সমস্যার উদ্ভব হয়নি বলে গবেষকরা নিশ্চিত করেছেন। বরং মূল সমস্যা মেটফরমিন এপিআইতে ছিল, যা তারা অন্য একটি প্রস্তুতকারী থেকে কিনে থাকে।’ বেক্সিমকো আরও জানায়, ‘তারা বর্তমানে ভিন্ন একটি প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে মেটফরমিন এপিআই কিনছে এবং এনডিএমএ’র মাত্রাও পরীক্ষা করে দেখছে।’
সিপি