কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউনের নতুন নিয়ম কাউন্সিলর মোরশেদের!

সবার জন্য ১৪ দিন হলেও চট্টগ্রামের একজন জনপ্রতিনিধির বেলায় কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম ১০ দিন! লকডাউন করা তার বাড়িও খুলে দেওয়া হয়েছে ১০ দিনের মাথায়!

কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউনের এই বিশেষ নিয়ম তৈরি করেছেন চট্টগ্রাম নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তার।

যে রোগীকে নিজের গাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন কাউন্সিলর মোরশেদ, সে রোগী ছিলেন করোনা আক্রান্ত। হাসপাতালে নেওয়ার ১ দিন পরই মারা যান ওই নারী। এ ঘটনার পর নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন তাকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় তিনি বেরিয়ে পড়লেন ঘর থেকে। গণজমায়েত ঘটিয়ে বিতরণ করছেন ত্রাণ।

আবার এসব দেখে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।

স্থানীয়রা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম ভেঙে রাস্তায় নেমে আসা অন্তত সচেতন জনপ্রতিনিধির মানায় না। কারণ এতে তিনি সবাইকেই করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন।

জানা গেছে, ১২ এপ্রিল অসুস্থ নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যান কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তার। ১৩ এপ্রিল ওই নারী মারা যান। এরপর নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এলে জানা যায় ওই নারী করোনা আক্রান্ত ছিলেন।

সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসন কাউন্সিলর মোরশেদকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠায়। লকডাউন করা হয় তার বাড়িও।

প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ থেকে ২৭ এপ্রিল মোট ১৪ দিন নিজ ঘরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা মোরশেদের। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় ২৩ এপ্রিল জনসমাগম ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি। তার বাড়ির লকডাউনও প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে ভাঙা হয়।

২৩ এপ্রিল ত্রাণ বিতরণের কথা স্বীকার করে ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তার মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২২ এপ্রিল সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয় আমার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ। তাই আমি ২৩ এপ্রিল ত্রাণ বিতরণ করেছি।’

প্রশাসনের কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউনের নিয়ম মেনে ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই তিনি মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসন কাউকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিলে কোয়ারেন্টাইন শেষে নিয়ম অনুযায়ী তাকে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় করোনা পরীক্ষার ফলাফল যাই আসুক না কেন ১৪ দিন তার কোয়ারেন্টাইনে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া লকডাউন হওয়া বাড়িতে ১৪ দিন কারও প্রবেশ এবং ওই বাড়ি থেকে কারও বের হওয়ার সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোন বাড়ি লকডাউন করা হলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিন ওই বাড়িতে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, ওই বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারবে না। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনেও থাকতে হবে ১৪ দিন। প্রশাসনের নির্দেশনায় কোয়ারান্টাইনে থাকা কারও রির্পোট যদি নেগেটিভ আসে তাহলে সে রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট থানায় যাবে। থানা থেকে ওই ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।’

১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, ‘আমার সাথে এই নামের কারও কথা হয়নি। যদি তিনি দাবি করেন আমার সঙ্গে তার কথা হয়েছে, তাকে বলুন প্রমাণ দিতে। কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউনের নিয়ম সবার জন্যই একই।’

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান বলেন, ‘কাউন্সিলর মোরশেদ আক্তারের করোনা টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ নাকি পজিটিভ সে বিষয়ে থানায় কোন নথি আসেনি। আমরা নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলতে পারি না।’

এদিকে মোরশেদের যে গাড়িতে করে করোনা আক্রান্ত নারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয় সে গাড়ির চালক ইদ্রিস আলম মনা’র কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। আবারও ওই নারীর চিকিৎসা নিশ্চিতে কাউন্সিলর মোরশেদের সঙ্গে ছিল তার সহকর্মী দেলাওয়ার। তিনিও কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি।

শুধু তাই নয়, নির্ধিদ্বায় তারা দুইজনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন গোটা পাহাড়তলী থানা জুড়ে। তাদের কারণে ঝুঁকির বেড়েছে পাহাড়তলী থানা এলাকায়।

নগরীর ১৬টি থানা এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়তলী থানা। এ থানা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যাও আশংকাজনক। নগরীর মধ্যে পাহাড়তলী থানাতেই সর্বোচ্চ ১১ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীতে যে ৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২ জন পাহাড়তলী থানা এলাকার। এমনকি মারা যাওয়া ৬৫ বছরের বৃদ্ধ একসময় ছিলেন কাউন্সিলর মোরশেদের বাড়ির দারোয়ান। মোরশেদের বাড়ির নাইট গার্ডও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।

বর্তমানে এই থানার মোট ৬টি বাড়ি লকডাউন রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে করোনা ‘কান্ডে’ শীর্ষে রয়েছে পাহাড়তলী থানা।

জেএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!