কোরবানি ঈদ/ ভিক্ষায় ক্লান্ত কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা

ঈদুল আজহায় বাড়ি না গিয়ে পশু জবাই ও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহের কাজ করে ক্লান্ত কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল ভিক্ষা করা, ভ্যান বা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে লাকড়ি আনাসহ শ্রমসাধ্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কোরবানির সময় অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীকে পশু জবেহ করার কাজেও লাগানো হয়।

অভিভাবকরা ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসা ভর্তি করলেও ভিক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাই চলছে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অসচ্ছল ও পিতামাতৃহীন এতিমরাই সাধারণত বিনা বেতন বা স্বল্প বেতনে কওমী মাদ্রাসাগুলোতে পড়ে।

জানা গেছে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষেও নানা কাজ দেওয়া হয় এসব মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে। কোরবানির পশু জবাই করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া সংগ্রহ করে তা মাদ্রাসায় আনা ওদের অন্যতম প্রধান কাজ। কিছু মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের শুক্রবারে বাড়ি বাড়ি চাল ও টাকা সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়।

কওমী মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীরা এসব কাজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুশি মনে করেন।
কওমী মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীরা এসব কাজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুশি মনে করেন।

মাদ্রাসার ভেতরেও তাদের দিয়ে প্রাত্যহিক নানা ধরনের কাজ করানো হয়। রান্নার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করে তা ভ্যান ও ঠেলাগাড়িতে করে মাদ্রাসায় নিয়ে আসার দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। তবে কোরবানির সময় খাটুনি হয় সবচেয়ে বেশি। এ সময় শিক্ষার্থীদের ঈদের ছুটি বাতিল করে মাদ্রাসায় থাকতে হয়। মানুষের দান করা কোরবানির চামড়া মাদ্রাসায় আনার কাজে এসব শিক্ষার্থী দিনরাত ব্যস্ত থাকে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রক্তমাখা পাঞ্জাবি পরে নিজেরা ভ্যান চালিয়ে চামড়া বহন করছে এই শিক্ষার্থীরা। চামড়া
মাদ্রাসায় পৌঁছানোর পর তা ভাঁজ ও স্তূপ করা, ধোয়ামোছাসহ সব কাজ শিক্ষার্থীরাই করে।

একজন অভিভাবক বলেন, গরুর চামড়া ভারি। তা বহন করাও কষ্টসাধ্য। অথচ তা করানো হয় শিক্ষার্থীদের দিয়ে। শিক্ষার্থীরা এসব কাজ করতে না চাইলেও করতে বাধ্য হয়।

জানতে চাইলে কয়েকটি কওমী মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীরা এসব কাজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুশি মনে করেন। কোন প্রকার জোর করা হয় না।

হাটহাজারীর নজু মিয়া হাট বাথুয়া মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থী ভ্যানে চামড়া বহন তা করে মাদ্রাসার মাঠে রাখছে। কেউ তা ভাঁজ করছে। কেউবা ভাঁজ করা চামড়াগুলো স্তুপ করছে। কেউ কেউ আবার নলের পানি দিয়ে সেগুলো ধুয়ে পরিস্কার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা এসব কাজ করতে চাইলেও করতে বাধ্য হয়।

এছাড়া পশু জবেহ করার কাজটি করতে মানসিকভাবে শক্ত হওয়া আবশ্যক। অথচ কোরবানির সময় অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীকেও পশু জবেহ করার কাজে লাগানো হয়।

হাটহাজারী মাহমুদিয়া মদিনাতুল উলুম বাথুয়া মাদ্রাসার মুহতাম মাওলানা মোহাম্মদ শফি বলেন, এ বছর আমরা এক হাজারের মত চামড়া সংগ্রহ করেছি। চামড়া বিক্রি করে পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকা আয় হতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা সংরক্ষণ পরিষদের সেক্রেটারি মাওলানা মঈনউদ্দীন রুহি বলেন, ছাত্ররা পড়ালেখার পাশাপাশি মাদ্রাসায় চামড়া সংগ্রহ করে সহযোগিতা করেন। এতে কোন অপরাধ বা দোষের কিছু নেই।

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ফকিহ মাওলানা আবদুল ওয়াজেদ বলেন,আমাদের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা কখনো এসব কাজ করে না। শিক্ষার্থীর কাজ পড়ালেখা করা। শ্রমিকের কাজ নয়। এগুলো কওমী মাদ্রাসায় করা হয়। তারা এদেশে ভিক্ষাভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা চালু করেছে। আমরা কখনো এমন কাজ সমর্থন করি না।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!