কোটি টাকার প্রতারণা/একবছর পালিয়ে থাকার পর পুলিশের হাতে ধরা শাহ আলম

0

প্রতারক শাহ আলমের জালে পা দিয়ে দিশেহারা নগরের অসংখ্য ব্যবসায়ী। শাহ আলম কাউকে রড, কাউকে টিন সরবরাহ এবং কারো কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত করে আত্মগোপনে চলে যান।

আত্মগোপনে যাওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে বাকলিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে। শাহ আলম কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার মোখলেছুর রহমানের ছেলে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন বার্মা কলোনিতে বসবাস করে তার পরিবার।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাকলিয়া থানার মামলা নম্বর-৫০(১২)২০১৯ এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সূত্রে শাহ আলমকে বাকলিয়া থানা পুলিশ নারায়নগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানা ১৫টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের খবরে থানায় অংখ্য পাওনাদার ভিড় জমাচ্ছেন।’

s alam president – mobile

ওসি নেজাম আরো বলেন, ‘স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল থেকে লোহার রড, টিনসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। আবার কেউ কেউ প্রতি লাখে ৩ হাজার টাকা হারে মাসিক সুদে শাহ আলমের নিকট টাকা লগ্নি করেছেন। কোন কোন ভুক্তভোগী প্লট কেনার জন্যও শাহ আলমকে টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।’

পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেটের নুর উদ্দিন এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী নুর উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘শাহ আলমের সাথে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রায় ৫ বছরের পুরোনো। ৪ বছর তিনি ঠিকঠাক মাল সাপ্লাই দিয়েছেন। কিন্তু এক বছর আগে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যান।

চট্টগ্রাম নগরীর কালামিয়া বাজারের মেসার্স মদিনা আয়রন মার্টের পরিচালক মোহাম্মদ শওকত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, শাহ আলম আবুল খায়ের স্টিলের ওয়েস্টেজ আইটেমের অকশন বিট করতেন। আমরা লোহার রড, অ্যালুমনিয়াম শিট ক্রয় করতাম। মালামাল সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা নিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

Yakub Group

মুরাদপুরের রফিক এন্ড সন্সের পরিচালক এসএম কামাল উদ্দিন জানান, শাহ আলমের নিকট তাদের পাওনা ১৭ লাখ টাকা। পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেটের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রগতি এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী মো. বখতিয়ার উদ্দিনের পাওনা ৫ লাখ টাকা। হামজারবাগ এলাকার জেএন্ডবি ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী সাইফুদ্দিন পাবেন ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নুরে আলমের পাওনা ১৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। এভাবে প্রায় ১৫ জনের বেশি পাওনাদার থানায় তাদের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য থানায় এসে ভিড় জমান।

তবে পাওনাদারদের কেউ কেউ বলছেন, শাহ আলম ব্যবসায়ী হিসেবে এক প্রকার সফল ছিলেন। কমিটমেন্ট অনুসারে তিনি আবুল খায়ের স্টিলের ওয়েস্ট মালামাল আমাদের কাছে বিক্রি করতেন। কিন্তু তিনি সুদে টাকা নিয়ে জায়গার ব্যবসায় নেমেছিলেন। আরেফিন নগর এলাকায় তার ১০ কাঠার একটা প্লট কাগতিয়া দরবারের লোকজন স্থানীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে নাম মাত্র মূল্যে দখলে নেয়। একদিকে সুদের দেনা বাড়তে থাকে, অপরদিকে প্লট হাতছাড়া। সব মিলে ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা শুরু করে শাহ আলম। এভাবে মার্কেট থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা তুলে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শাহ আলমকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেন জানান বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

এফএম /এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!