কেন্দ্রীয় নেতার ভাগে ‘পাঁচলাইশ’ তুলে দিয়ে ১৩ কমিটিই হালাল করে নিল চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ

নাহিয়ানের ভাগে সভাপতি, লেখকের কোটায় সেক্রেটারি

চট্টগ্রামে একই দিনে একপেশে ও অসাংগঠনিকভাবে ১৩ ইউনিটের কমিটি অনুমোদনের পর তৃণমূলের বিক্ষোভ সামাল দিতে খোদ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও একটি ইউনিট কমিটি উপহার দেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর।

আর নগর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে পাঁচলাইশ থানা ইউনিট কমিটি উপহার পেয়ে নগরের বাকি ১৩ ইউনিটের কমিটি গঠনে অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য— এই অভিযোগ উঠছে খোদ নগর ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্য থেকে।

নগর ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এমন অভিযোগের সত্যতাও মিলছে। জানা গেছে ১০ জানুয়ারি এক যোগে ১৩ কমিটি অনুমোদন দেয়ার পর নগরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া শুরু হলে এর পরের দিন বিচ্ছিন্নভাবে শুধু মাত্র পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এ কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মীর জিয়ান আলী খানকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মোহাম্মদ হোসেন রবিনকে।

আগের দিন দেওয়া ১৩ কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সামাল দিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এই কমিটি উপহার হিসেবে দেন তারা। যার মধ্যে মূল দুটি পদের একটি নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি জয় ও অন্যটি নেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা পরে নিজেরাই এই কথা বিভিন্ন জনকে জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘জাকারিয়া দস্তগীর আমাকে নিজে বলেছে যে পাঁচলাইশ থানা কমিটিতে সেক্রেটারির নাম দিয়েছে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনই লেখক ভট্টাচার্যকে নামটি পাঠান। আপনি এই বিষয়ে সাজ্জাদের সাথে কথা বলুন। সেও আমাকে এসব কথা নিজে বলেছে।’

অন্যদিকে পাঁচলাইশ থানার সভাপতি পদ পাওয়া মীর জিয়ান আলী খানের নাম দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। নগর ছাত্রলীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে এই জিয়ান আলী কেন্দ্রীয় সভাপতি নাহিয়ানের মাকে ‘মা’ ডাকেন। এই কারণে এক বছর ধরেই বিভিন্ন সময়ে এই পদে জিয়ানকে দেওয়ার আগ্রহের কথা বলে আসছিলেন তিনি।

আর চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ১৩ কমিটির অনিয়মের খতিয়ানকে জায়েজ করতে কেন্দ্রীয় সভাপতির এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগায় নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার ভাষায়, ‘যেহেতু কেন্দ্রীয় সভাপতি একটা থানার একটা ভাগ নিচ্ছেন, সেহেতু কেন্দ্রীয় সেক্রেটারিকেও অন্য একটি পদ নেওয়ার টোপ দেন তারা। আর সেটি লুফে নিয়ে এমন একজনকে সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য সুপারিশ করেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি লেখক ভট্টাচার্য্য— যিনি একটা হত্যামামলার প্রধান আসামি। আর কয়দিন বাদেই তার মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।’

চট্টগ্রাম নগরীর হামজারবাগ এলাকার চাঞ্চল্যকর নুরুল আলম রাজু হত্যা মামলাটির প্রধান আসামি মোহাম্মদ হোসেন রবিন। চলতি মাসে এই মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত রবিন ষষ্ঠ শ্রেণির গণ্ডিই পার হতে পারেননি একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনের সাথে গত শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি অসুস্থ ছিলেন জানিয়ে কথা বলার জন্য একদিন সময় চেয়ে নেন। শনিবার আবার তাকে ফোন করলে তিনি ডাক্তারের চেম্বারে রয়েছেন বলে জানান। এর পর দফায় দফায় তাকে কল দেয়া হলেও সাড়া দেননি তিনি।

তবে কেন্দ্রীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাঁচলাইশ থানা কমিটিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাগ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। একইভাবে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের মুঠোফোনে কল করলেও তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

নগর ছাত্রলীগের অন্তত ৩ জন নেতার সাথে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের আলাপ হয়েছে যাদের জাকারিয়া দস্তগীর নিজে জানিয়েছেন পাঁচলাইশের কমিটিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভাগ নেওয়ায় নগর ছাত্রলীগের রীতিনীতি ভেঙ্গে একপেশেভাবে দুটি মূল পদেই সিটি কলেজ ব্লকের নেতাদের পদ দিতে হয়েছে। এজন্য এমইএস কলেজ ব্লকের নেতাদের কাছে ফোন করে দুঃখও প্রকাশ করেছেন জাকারিয়া দস্তগীর— এমন কথা জানিয়েছেন ওই নেতারা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!