‘পানিতে ডুবে গেছে চুলা, এখনো হয়নি কোনো রান্না, আমরা কি খাব কেউ নেননি খোঁজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে ফটোসেশন করে চলে গেছেন। তাই ক্ষোভে সকাল থেকে গেইটে এসে অবস্থান করছি’।
রাতের আঁধারে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কেইপিজেড লেকের পানি ঢুকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকায় দুই শতাধিক পরিবারের বসতঘর প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (৪ আগস্ট) রাত আনুমানিক ১২টায় কেইপিজেড এলাকায় লেকের অতিরিক্ত পানির ঢলে প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ফসলি ক্ষেত, গবাদিপশুর খামার, মৎস্য পুকুরের মাছও।
এ ঘটনায় বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরের উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকার কেইপিজেডের মূল ফটকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বড়উঠান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম, সাবেক ইউপি সদস্য জাফর আহমদ, উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী মোমেনা আকতার নয়ন, স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, শেখ আবদুল হান্নান, শেখ আবদুর শুক্কুর, মোহাম্মদ তৈয়ব, হাফেজ ফারুক, মোহাম্মদ একরাম, ইয়াছিন মাসুদ, তৈয়বা আকতার প্রমুখ।
ঘটনার পর রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম, স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ মান্নান খান, ইউপি সদস্য সাজ্জাদ খান সুমনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল মান্নান বলেন, ‘রাতের আঁধারে কেইপিজেড লেকের পানিতে প্লাবিত গ্রাম। নষ্ট হয়েছে ফসলসহ ক্ষেত খামার, পুকুরের মাছও। পানিবন্দি পরিবার গুলো কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত। পানিতে ডুবে গেছে চুলা, অনেকের ঘরে হয়নি কোনো রান্না, ক্ষতিগ্রস্তরা কি খাব কেউ নেননি খোঁজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এসে ফটোসেশন করে চলে গেছেন। তাই ক্ষোভে সকাল থেকে গেইটে এসে মানবন্ধনে অবস্থান করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আহমদ জানান, ‘রাতের আঁধারে কেইপিজেডের লেকের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত খামারসহ ৩০-৪০ পুকুরের মাছ। পানিতে ডুবে গেছে আমাদের ঘর। অনেকের ঘরে তো রান্নাবান্নাও বন্ধ।’
স্থানীয় বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘২০০৩ সালে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করেনি কেইপিজেড। এরপর ২০১২ সালেও একই ঘটনা ঘটে, তারপরও নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। কেইপিজেডের লেকের পানির কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রদান করা হয়েছে তাদের। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য সহায়তা দিয়েছে এবং ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে ড্রেনের ব্যবস্থা করে দেবে বলেও জানায় কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ।’
কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান জানান, ‘এটি একটি এক্সিডেন্ট। সকালে আমাদের একটি টিম পরিদর্শনে গিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে। সরেজমিনে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’