কেঁদেই চলেছে মাজেদ কন্যা, চাকরি চেয়ে মূখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ অসুস্থ জরিনা

মোবাইলে আব্বার ছবি বের করে সমানে কেঁদে চলেছে ছ’বছরের মেয়েটি। পার্ক স্ট্রিটের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী হুমায়রা ইতিমধ্যেই জেনে গিয়েছে, তার ‘আব্বা’ আর ফিরবে না। আর কোনওদিন তাকে ইংরেজিও পড়াবে না। বাংলাদেশে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আব্দুল মাজেদের ফাঁসির খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার ভারতীয় স্ত্রী জরিনা বেগম। আগে থেকেই স্নায়ুরোগে ভুগছিলেন জরিনা। এই অসুখের কারণে মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই তার হাত-পা শিথিল হয়ে যায়। স্বামী হারানোর আঘাত যেন সেই অসুখে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। বাগনানে বাপের বাড়িতে এখন কার্যত শয্যাশায়ী জরিনা বেগম।

বিধ্বস্ত গলায় ফোনে জানালেন, মাত্র ২২ বছর বয়সেই প্রথম স্বামীকে হারিয়েছিলাম। তার প্রায় আট-ন’বছর বাদে পাশের গ্রামের এক উকিলের মাধ্যমে পরিচয় হয় আব্দুল মাজেদের। তারপর বিয়ে। আমরা ভেবেছিলাম, উনি বয়স্ক মানুষ। পেশায় মাস্টারমশাই। তাই আল্লার ভরসায় আমাদের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, মানুষটাকে চিনতে পারিনি! এত কথা, আমার কাছে সব গোপন করেছে মানুষটা! পরে জানলাম, উনি নাকি বাংলাদেশে মুজিবুর রহমানের মতো মানুষকে খুন করেছেন! ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। রাগী হলেও মানুষ হিসেবে ভালোই ছিল। কী জানি, আমিই হয়তো চিনতে ভুল করেছি!

জরিনার কথায়, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর আমি অনেকবার থানা-পুলিস করেছি। কিন্তু খোঁজ দিতে পারেনি কেউ। মাস দেড়েক এভাবে চলার পর যখন হাল ছেড়ে দিয়েছি, তখনই খবর পেলাম বাংলাদেশে ধরা পড়েছে আমার আলি আহমেদ। এই নামেই থানায় মিসিং ডায়েরি করেছিলাম। ৭ এপ্রিল মীরপুরে গ্রেপ্তারের খবর চাউর হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি সহ তা ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকেই প্রথম জানলাম। তারপর অন্যান্য সংবাদপত্রেও সেই খবর বেরিয়েছে। সেদিন বুঝলাম আলি আহমেদই আসলে আব্দুল মাজেদ।

এই পক্ষের ছ’ বছরের মেয়ে হুমায়রা ছাড়াও জরিনার প্রথম পক্ষের এক মেয়ে রয়েছে। বয়স ১৭-১৮ হবে। স্বামীকে হারিয়ে এখন কী করে তিনজনের সংসার চালাবেন, ভেবে কূল পাচ্ছেন না তিনি। তাই মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছেন জরিনা। ধরা গলায় বললেন, আমাদের তো কোনও দোষ নেই। আমরা একজন মানুষকে ভরসা করেছিলাম। সরকার পাশে না দাঁড়ালে আমার সংসারটা ভেসে যাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!