কিশোরীর ফুসফুস ছিঁড়ে গেল বখাটের ৯ ইঞ্চি ছুরির আঘাতে, জ্ঞান ফেরে দুদিন পর
দরিদ্র মেয়েটি হাসপাতালের শয্যায়
বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় চট্টগ্রাম নগরীতে যুবকের ছুরিকাঘাতের শিকার হল ১৫ বছরের এক কিশোরী পোশাককর্মী। এমনই সেই আঘাত— মেয়েটির ফুসফুসের নালীও ছিঁড়ে গেছে ৯ ইঞ্চি লম্বা সেই ছুরির ফলায়। মুমূর্ষু কিশোরীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে এক পথচারী ঘটনাটি জানান জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। এরপরই চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাকলিয়ার শান্তিনগর বগারবিল এলাকায় ঘটেছে এমন ঘটনা।
রক্তক্ষরণে মুমূর্ষু হয়ে পড়া ওই কিশোরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর বাকলিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা তাকে তাৎক্ষণিক পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেন। পরিবারের দুরবস্থা দেখে মেয়েটির চিকিৎসার জন্য তার বাবার হাতে সোর্সমানির ১০ হাজার টাকা তুলে দেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিন। ঘটনার পর থেকে তিনি মেয়েটির সার্বক্ষণিক খোঁজখবরও রেখে যাচ্ছেন।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ওসি নেজাম বলেন, ‘ছুরির আঘাতে মেয়েটির ফুসফুসে গুরুতর আঘাত লেগেছে। তার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থাও বেশ খারাপ। আমি সেটা দেখে মেয়েটির বাবার হাতে সোর্সমানির জন্য রাখা ১০ হাজার টাকা তুলে দিই— যদি তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি পায় পরিবারটি। মেয়েটির চিকিৎসার খোঁজখবরও রেখে যাচ্ছি প্রতিদিন। কালকে (বুধবার) সকালেও তার জন্য খাবার নিয়ে হাসপাতালে যাবো।’
জানা গেছে, ওই কিশোরী চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজার দিদার মার্কেট এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করে। গার্মেন্টসে যাওয়া-আসার পথে ২২ বছর বয়সী রাসেল প্রায়ই মেয়েটিকে উত্যক্ত করতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রাসেল পরে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় কিশোরীর পরিবারে। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে রাসেল সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হলে তারা জানতে পারে, রাসেল মূলত বখাটে। চুরি ও ছিনতাইয়ের মতো অপকর্মেও সে জড়িত। বখাটে রাসেলের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় রয়েছে একটি অস্ত্র মামলাও। এমন তথ্য জানার পর ওই কিশোরীর পরিবার বেঁকে বসে। তারা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর রাসেল প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। গত ৬ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে গার্মেন্টস ছুটি হওয়ার পর বাকলিয়া শান্তিনগর বগারবিল এলাকার হারুন কলোনির পশ্চিম পাশে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছামাত্র সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা রাসেল ছুরি নিয়ে মেয়েটির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরনের ওড়না ধরে টান মারে। এরপর তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। মেয়েটির বুকের বাম পাশে এলোপাতাড়ি ছুরির আঘাতে রক্তে ভিজে যায় পাকা রাস্তা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনার একপর্যায়ে ওই কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়ে।
পথচারীরা এ ঘটনা দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে বিষয়টি জানায়। সেখান থেকে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিনকে ঘটনাটি অবহিত করা হলে পুলিশ ছুটে এসে মুমূর্ষু ওই কিশোরীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হতে থাকলে বাকলিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিক পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেন। টানা দুদিন পর মেয়েটির জ্ঞান ফেরে। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও সে চিকিৎসাধীন। ছুরির আঘাতে মেয়েটির ফুসফুসের নালী ছিঁড়ে গেছে। তার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।
ঘটনার শিকার কিশোরীর বাবা বললেন, ‘ঘটনার দিন পুলিশ যদি আমার মেয়েকে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত না দিতো, তাহলে হয়তো মেয়েটি বাঁচতো না। তারা আমার মেয়ের চিকিৎসার নিয়মিত খোঁজখবরও নিচ্ছে।’
এদিকে পুলিশ গত ৯ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত রাসেলকে গ্রেপ্তার করেছে। শান্তিনগর বগারবিল এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয় ঘটনায় ব্যবহৃত ৯ ইঞ্চির লম্বা ছুরিটিও।
রাসেল শরিয়তপুর গোসাইরহাটের দক্ষিণ চর কুমারিয়ার মো. বাবুলের ছেলে। বর্তমানে থাকে বাকলিয়ার শান্তিনগর বগারবিল এলাকার রশিদ মাঝির কলোনিতে।
সিপি