কারাগারে গেলেন মীর নাছির, আদালতে কাঁদলেন মীর হেলাল

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

রোববার (৮ নভেম্বর) ঢাকা জেলা জজের আদালতে আত্মসমর্পন করেন। এসময় তাঁর সাথে তাঁর ছেলে ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনসহ বিএনপিপন্থী শতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

তাঁর ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনও এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। মীর হেলাল ২৭ অক্টোবর ঢাকা যুগ্ম জেলা জজের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চাইলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ৩ নভেম্বর চেম্বার জজ আদালতে আবার জামিন আবেদন করলে তিনি জামিন পেয়ে ৫ নভেম্বর কারামুক্ত হন।

সন্তানের কারাগমণের দৃশ্য দেখে সেদিন আদালত প্রাঙ্গণে কেঁদেছিলেন মীর নাছির। আপ্লুত কণ্ঠে সেদিন মীর নাছির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এই মামলায় আমরা একবার বেকসুর খালাস পেয়েছিলাম। সরকার আপীল করে সাজা বহাল করেছেন। এক-এগারোর সরকার আওয়ামী লীগের নেতাদেরও একইভাবে মামলা দিয়েছিল। আমরা সাজা খাটতে জেলে যাচ্ছি, আর তারা এখন মন্ত্রীপরিষদে।’

আজ পিতার কারাগমণের দৃশ্যে চোখের পানি মুছে মীর হেলাল বলেন, এটি রাজনৈতিক হয়রানির মামলা। আমার আব্বা শিগগিরই জামিনের ফিরবেন বলে আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে।

প্রসঙ্গত, জরুরি অবস্থার সময় অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলালের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ গুলশান থানায় দুদক মামলা করে। এ মামলায় বিশেষ জজ আদালত একই বছরের ৪ জুলাই দেওআ রায়ে মীর নাছিরকে ১৩ বছর এবং মীর হেলালকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২০১০ সালের ১০ আগস্ট মীর নাছিরের এবং একই বছরের ২ আগস্ট মীর হেলালের সাজা বাতিল করে রায় দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন হাইকোর্টের এ রায় বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল আবেদন করে। আপিল বিভাগ ২০১৪ সালের ৩ জুলাই এক রায়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টেই বিচার করার নির্দেশ দেয়।

ওই নির্দেশে পুনরায় শুনানি শেষে ১৯ নভেম্বর ২০১৯ রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি। ১৫৯ পৃষ্ঠার এ রায়ে তাদের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করেই হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ ১৫ অক্টোবর এক আদেশে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতির আবেদন খারিজ করে দেন। আবেদন খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হলো।

এই মামলায় ১৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বিএনপি-জামায়াত সরকারের বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ইতোমধ্যে এই মামলায় দুই বছর নয় মাস একদিন কারাভোগ করেছেন।

এফএম/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm