কামড় দিয়েই সোনা চেনে চট্টগ্রামের দুই দুর্ধর্ষ চোর, খেয়ে আসে চুরিশেষে

শয়নে স্বপনে সব সময় তার চোখে ভাসে স্বর্ণ। যেখানেই যান তিনি শুধু স্বর্ণের সন্ধান করেন। স্বর্ণের পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের প্রায় সবকটি জেলা। দাঁতে কামড় দিলেই তিনি আসল আর নকল সোনার পার্থক্য বুঝতে পারেন।

না এখানে কোন স্বর্ণ ব্যাবসায়ী বা স্বর্ণের খনিতে কাজ করা অভিজ্ঞ কারো কথা বলা হচ্ছে না, এসব গুণ একজন দক্ষ স্বর্ণ চোরের। তিনি হচ্ছেন মো. শফিকুল ইসলাম। তবে কাজের সুবিধার্থে তিনি কখনো সফিকুল আবার কখনো শইক্কা নামেও পরিচিত হন।

এই দক্ষ চোর (!) দেশের বিভিন্ন এলাকার দামী হোটেলে থেকে চুরির কাজ সারেন, আবার যে বাড়িতে চুরি করেন সে বাড়িতে রান্না করে খেয়েও আসেন।

১৫ দিনের টার্গেট নিয়ে তিনি হোটেল বুকিং করেন,আর এই সময়ের মধ্যেই তিনি এলাকায় দু চারটি চুরি করেই সটকে পড়েন ওই এলাকা থেকে।

আর এরকম এক দুর্ধর্ষ স্বর্ণ চোরকে আটক করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নগরীর হার্ট অব সিটি নামে একটি আবাসিক হোটেল থেকে চুরিকৃত মালামাল সহ তাকে আটক করা হয়। এসময় আনোয়ার হোসেন নামে তার এক সহযোগিকেও আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ৫০০ পিস ইয়াবা, ২টি আইফোন, দুটি স্বর্ণের চুড়ি, একটি স্বর্ণের চেন ও একটি আংটি জব্দ করা হয়।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন- ‘আমরা গতকাল দু’জন চোরকে আটক করেছি। তারা খুব দক্ষ প্রকৃতির চোর। শফিকুল তো চুরি করতে গিয়ে রান্না করে খেয়েও আসে, আর আনোয়ার চোরাই মোবাইল বিক্রি করে। ইয়াবা সে নিজেও খায় আবার বিক্রিও করে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও চুরির অভিযোগে শুধু চট্টগ্রামেই রয়েছে চারটি মামলা।’

আটক দুজনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ওসি আরও জানান, ‘শফিকুল চুরি করার সময় স্বর্ণালংকার পেলে তা দাঁতে কামড় দিয়ে, আগুন লাগিয়ে টেস্ট করে দেখে আসল স্বর্ণ কিনা। পরবর্তীতে আসল স্বর্ণ মনে হলে সাথে সাথে নিয়ে নেয়। চট্টগ্রাম, ঢাকা, ফেনীতে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার চুরি করেছে শফিকুল। সে একটি হোটেলে ১৫ দিনের জন্য অবস্থান করে। চুরি শেষ করে আবার অন্য জেলায় চলে যায়। যাতে কেউ তাকে ধরতে না পারে।’

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এভাবে সে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পাঁচলাইশ থানাধীন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার তিন তলা ভবনের একটি বাসা হতে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে। তার মধ্যে কিছু স্বর্ণালংকার নিজ হেফাজতে রাখে। তার নিকট থেকে পাওয়া স্বর্ণালংকার সমূহ পাঁচলাইশ থানা এলাকা হতে চুরি করা স্বর্ণালংকার বলে সে স্বীকার করে। সে ওই বাসায় থাকা ভাত তরকারি খাওয়ার পর চা বানিয়েও খায়। শফিকুল ১৫ দিনের চুরির মিশনে এসে নগরীর বিভিন্নস্থানে কখনো রিক্সা বা কখনো পায়ে হেঁটে চুরি করার স্থান চিহ্নিত করে। পরে রাত ২টা/৩টার দিকে মাত্র কয়েক মিনিটেই গ্রিল কেটে বা তালা ভেঙে চুরি করে। সে চট্টগ্রাম শহরে ৫০/৬০টি চুরি করেছে এবং অনুরূপভাবে দেশের বিভিন্নস্থানে একই স্টাইলে চুরি করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছ।’

আটক শফিকুল ইসলাম (৩১) সুনামগঞ্জ জেলার বাতাঘাট ইউনিয়নের মো. আক্তার হোসেনের ছেলে। সে বর্তমানে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন স্টেশন রোড এলাকার ভাসমান বাসিন্দা। অপরদিকে মো. আনোয়ার হোসেন (৪৫) চাঁদপুর জেলার লালপুর বাজারের দর্জি বাড়ির মৃত আহম্মদ হোসেনের পুত্র বলে জানায় পুলিশ।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!