কাতারের মর্গ থেকে মায়ের কোলে ফিরছে চট্টগ্রামের ছেলের লাশ

সিলেটি তরুণের অতুলনীয় মহানুভবতা

একমাস ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের মর্গে পড়ে ছিল চট্টগ্রামের ছেলে গিয়াস উদ্দিনের মরদেহ। কাতারে ঘনিষ্ঠ কেউ ছিল না এই যুবকের। প্রবাসীদেরও কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসেনি। লাশ ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য ছিল না তার পরিবারেরও। ফলে দিনের পর দিন অন্ধকার মর্গেই পড়ে থাকে যুবকের লাশ। গত ১৮ অক্টোবর কাতারে হৃদরোগে মারা যান তিনি।

শেষপর্যন্ত কাতারপ্রবাসী এক বাংলাদেশি এগিয়ে এলেন মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে। ওই প্রবাসীর প্রচেষ্টায় মায়ের কোলে ফিরছে গিয়াস উদ্দিনের লাশ। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট লাশটি নিয়ে বাংলাদেশে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লাশ বিমানে উঠানোর আগে শুক্রবার আসরের নামাজের পর কাতারের রাজধানী দোহার হামাদ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গিয়াস উদ্দিনের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে।

মাঝখানে যে লোকটি, কাতারপ্রবাসী সিলেটের তরুণ সাদ হোসেন, তার প্রচেষ্টায় মায়ের কোলে ফিরছে হতভাগ্য গিয়াস উদ্দিনের লাশ। (বামে) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান তার হাতে মরদেহ পাঠানোর কাগজপত্র তুলে দিচ্ছেন।
মাঝখানে যে লোকটি, কাতারপ্রবাসী সিলেটের তরুণ সাদ হোসেন, তার প্রচেষ্টায় মায়ের কোলে ফিরছে হতভাগ্য গিয়াস উদ্দিনের লাশ। (বামে) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান তার হাতে মরদেহ পাঠানোর কাগজপত্র তুলে দিচ্ছেন।

৩৬ বছর বয়সী গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা এম চর হাটের গোরস্তান ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম আব্দুল মালিক। মাত্র দুই বছর আগে বিয়ে করেছিলেন গিয়াস। বাবা-মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তার পরিবার। ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন কাতারে।

জানা গেছে, কাতারের মর্গে বাংলাদেশি যুবকের লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন কাতারে একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত সিলেটের ছেলে সাদ হোসেন। একাই তিনি হাসপাতাল, দূতাবাস, জনশক্তি মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন ও বিমান অফিসের সব রকম প্রক্রিয়া সামাল দেন। মরদেহ দেশে পাঠানোর যাবতীয় খরচও তিনিই যোগান দেন।

তবে এর মধ্যেই গত ১১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে কাতারপ্রবাসী সাদ হোসেন অভিযোগ করেন, মর্গে পড়ে থাকা গিয়াস উদ্দিনের লাশ পাঠানোর জন্য কাতারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসানের কাছে গেলে তিনি ওই প্রবাসীর ফাইল না দেখেই সেটা ছুঁড়ে ফেলে দেন। ওই ফেসবুক লাইভের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

পরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার রেজাউল আহসান এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে রেজাউল আহসান যুক্তি দেখিয়ে বলেন, প্রবাসীর মরদেহ দেশে পাঠাতে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সারতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশে যাওয়ার পর মরদেহ বিমানবন্দর থেকে কে গ্রহণ করবে তা নিশ্চিত করা। কারণ সময়মতো গ্রহণ না করলে মরদেহে পচন ধরার আশঙ্কা থাকে।

তিনি বলেন, ‘দুপুরে মধ্যাহ্নভোজের ঠিক আগ মুহূর্তে সাদ হোসেন কাগজপত্র নিয়ে আসার পর এইসব বিষয় নিশ্চিত হতে গেলে আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। তারপরও আমার কথায় যদি তিনি কষ্ট পেয়ে থাকেন আমি অনুতপ্ত ও দুঃখ প্রকাশ করছি।’

পরে চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন, প্রবাসী সাংবাদিক এম এ সালাম, আমিন বেপারী এবং আকবর হোসেন বাচ্চুর উদ্যোগে মরদেহ পাঠানোর অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার অবসান ঘটে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!