কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপের ৪৫ মিনিটের ফোনালাপ, মোবাইল দিয়েছে পুলিশই

চট্টগ্রাম কারাগার থেকে স্বজনদের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ চেয়েও রাষ্ট্রপক্ষের তীব্র বিরোধিতার মুখে অনুমতি পাননি সিনহা হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ঘটনাটি ২০২০ সালের অক্টোবরের, আর এর ৯ মাসের মাথায় আদালতের এজলাসে বসেই ৪৫ মিনিট ফোনে কথা বলে নতুন করে আলোচনায় এলেন ওসি প্রদীপ।

সোমবার (২৩ আগস্ট) কক্সবাজার জেলার দায়রা জজ আদালতে মামলার প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলার সময় এই ঘটনা ঘটে। এজলাসে হাঁটু গেড়ে বসে প্রদীপের ফোনে কথা বলার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আদালত কক্ষের কাঠগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হত্যার দায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ। এ সময় অন্য আসামিরা তার আশপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মোবাইল ফোনে একের পর এক কল করে কথা বলেছেন সিনহা হত্যা মামলার এই আসামি। তার পরনে ছিলো কালো পোলো শার্ট। তবে কার সঙ্গে কথা বলেছেন তা জানা যায়নি। জানা গেছে, বরখাস্ত ওসি প্রদীপকে মোবাইল ফোনটি সরবরাহ করেছিলেন সেখানেই দায়িত্বরত এক পুলিশ কনস্টেবল।

এদিন আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে দেখে বিরক্তি প্রকাশ করে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘আমাকে নতুন করে চেনানোর দরকার নেই।’

প্রসঙ্গত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সোমবার। সেদিন থেকে টানা ৩ দিন ব্যাপী এ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে।মঙ্গলবার (২৪ আগন্ট) আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন সাহিদুল ইসলাম সিফাত। এর আগে মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌসের সাক্ষ্য দিয়ে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

আদালতে সাক্ষ্য প্রদানকালে সিফাত বলেন, ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাহারছড়া চেকপোস্টে সিনহার গাড়ি থামান পরিদর্শক লিয়াকত আলী। সিনহা গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে নামার সঙ্গে সঙ্গে লিয়াকত গুলি করেন। এতে সিনহা মাটিতে পড়ে গেলেও তিনি দীর্ঘ সময় বেঁচে ছিলেন। পরে আসামি ওসি প্রদীপ এসে প্রথমে সিনহার বুকের বাম পাশে লাথি মারেন। এরপর গলায় বুট জুতা দিয়ে চেপে ধরেন। এতে মেজর (অব.) সিনহা নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ মামলায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। মামলার আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী ও লিটন মিয়ার পক্ষে তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, অ্যাডভোকেট সৈকত কান্তি দে এবং অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বাদীকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেরা করেন।

এরপর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সিনহার সঙ্গী সাহিদুল ইসলাম প্রকাশ সিফাতের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত তার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে মেজর সিনহা নিহত হন পুলিশের গুলিতে। সেই ঘটনায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসী। পরে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের তিন সদস্যসহ পুলিশের তিন সোর্সকে।

চার মাসেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। এর মধ্যে ১২ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ২৭ জুন মামলার ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাগর দেব, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ। এ ছাড়া পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!