কাজীর দেউড়ি টু লাভলেইন অবৈধ পার্কিং—চাঁদাবাজি—যানজট, ‘নির্বিকার’ ট্রাফিক

কোনভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি টু লাভলেইন এলাকার অবৈধ পার্কিং বাণিজ্য। তিন সদস্যের একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সড়কটি। এক কিলোমিটার সড়কজুড়ে পার্কিং বাণিজ্যকে পুঁজি করেই গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজির বিশাল খাত।

অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজির টাকা যাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের পকেটেও। অভিযোগের তীর বেশি ট্রাফিক ইন্সেপেক্টর, ট্রাফিক সার্জেন্টের বিরুদ্ধেই।

সড়কটির অধিকাংশই দখলদারদের কবলে চলে গেছে অনেক আগেই। সড়কপথে এমন বিশৃঙ্খলার কারণে তীব্র যানজটে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। যানজটের কবলে পড়ে নষ্ট হচ্ছে শ্রমঘন্টা।

ভুক্তভোগীরা জানান, দিনের বেলায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও সন্ধ্যার পর এ যানজট জুবিলী রোড, লাভলেইন, কাজীর দেউড়ি, এসএস খালেদ রোড, আলমাস সিনেমার মোড়, ওয়াসা হয়ে লালখান বাজার ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে লাভলেইন মোড় এবং এর আশপাশের এক কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বেশিরভাগই দখল করে চলছে গাড়ির অবৈধ পার্কিং। স্থানীয় উঠতি বয়সের মাস্তানদের বেশ কয়েক ধাপে চাঁদা দিয়ে কাজীর দেউড়ি এলাকার সড়কে অবৈধ পার্কিং চালিয়ে যাচ্ছে তিনটি সিন্ডিকেট।

অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বরতদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে বসছে এমন পার্কিং। তবে ট্রাফিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের মুখে মুখেই ছড়িয়েছে এমন ভিত্তিহীন অভিযোগ।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তিন দিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, কাজীর দেউড়ি সুইমিংপুলের সামনের সড়ক থেকে কাজীর দেউড়ি মোড়, এস এ পরিবহন সড়ক, বিএনপি কার্যালয় ভবনসহ লাভলেইন মোড় পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে রাখা হয়েছে ট্রাক–পিকআপ।

স্থানীয়রা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, লোকাল (স্থানীয়) বেশ কয়েকটি গ্রুপের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে সড়কে এমন দখল বজায় রেখেছে তিনটি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুইমিংপুল কমপ্লেক্স থেকে কাজির দেউড়ি মোড় পর্যন্ত সড়কের অর্ধেক অংশ দখল করে অবৈধ পার্কিং গড়ে তুলেছেন চাঁদপুরের নুর মোহাম্মদ। তিনি নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা।

কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে এস এ পরিবহন মোড় পর্যন্ত সড়কে ট্রাক-পিকআপের অবৈধ পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করছে কুমিল্লার রুবেল। তিনি কাজীর দেউড়ি কাজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা। এস এ পরিবহন মোড় থেকে লাভলেইন পর্যন্ত অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন কুমিল্লার শাহ আলম। তিনি নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়মিত পুলিশ ও নামধারী ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ’কে মাসোহারা দিয়ে বসছে এমন অবৈধ পার্কিং এবং এই তিন সিন্ডিকেট সামনে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে পার্কিং বাণিজ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তিন সিন্ডিকেটের অধীনে কাজীর দেউড়ির কমপক্ষে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সড়কের অর্ধেক অংশ দখল করে রাখা হয় প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক-পিকআপ। প্রতিটি গাড়ি থেকে আদায় করা হয় প্রতিমাসে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। যার ৫০ শতাংশ চলে যায় স্থানীয় ট্রাফিক সংশ্লিষ্টদের হাতে।

তবে কোতোয়ালী ইন্সপেক্টর (টিআই) নুরুল আবসার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। লোক মুখে মুখে এমন কথা ছড়িয়েছে।’ এছাড়া ওই সড়কে কোন গাড়ি পার্কিং করা হয় না বলেও দাবি করেন তিনি।

তবে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টাইলস মার্কেটসহ ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের মালামাল ওঠানামা করার জন্য মাঝেমধ্যে কিছু গাড়ি সেখানে দাঁড়ায়।’

কিন্তু টাইলস মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকার সিন্ডিকেট তিনটির কাছে রীতিমত জিম্মি হয়ে পড়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। কেউ দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি রাখতে বাঁধা দিলে সংঘবদ্ধ হামলার শিকার হতে হয়।


এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm