চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া ১০ শীর্ষ প্রকল্পের অন্যতম হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। তবে এর সংযোগ সড়ক পৃথক প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ (শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক)’ প্রকল্পও। একনেক সভায় এজন্য ৪০৭ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এজন্য ‘আনোয়ারা-শিকলবাহা কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শিকলবাহা থেকে আনোয়ারা উপজেলা পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপদ, দ্রুত, ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৪০৭ কোটি ৮ লাখ টাকা।
সূত্রমতে, সড়কটি মোট ১১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে কালামিয়া দিঘী থেকে ওয়াই জংশন পর্যন্ত ৮.৩ কিলোমিটার হবে চারলেন, আবার কালামিয়া দিঘী থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত ৩.২ কিলোমিটার হবে দুই লেনের সড়ক। ৪ লেনের সড়কে আলাদাভাবে সাইক্লিং ও পায়ে হাঁটার আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম জেলার শিকলবাহা থেকে আনোয়ারা উপজেলাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ককে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত, নিরাপদ, দ্রুত ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে।’
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেলের মুখ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কটি করা না হলে সুড়ঙ্গপথের পুরোপুরি আর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত হবে না।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৩০ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয়। এটি আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ জানায়, শিকলবাহা ওয়াইজংশন হয়ে আনোয়ারা সড়কটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। এর দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। সড়কটি সরাসরি কোনো বিভাগীয় সদরকে সংযুক্ত করেনি। তবে একটি জাতীয় মহাসড়ক, একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কর্ণফুলী টানেল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাধ্যমে মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্রবন্দর ও টেকনাফ স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে।
সড়কটির পশ্চিম পাশে কোরিয়া রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা এবং চায়না ইকোনমিক জোন, ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ইউনিট-১, ইউনিট-২, মেরিন একাডেমিসহ অসংখ্য শিল্প কারখানা অবস্থিত। সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন এই শিল্প কারখানার কর্মকর্তা কর্মচারীসহ পটিয়া, কর্ণফুলী, আনোয়ারা-বাঁশখালী ও কক্সবাজার জেলার জনসাধারণ চলাচল করেন।
এরইমধ্যে কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজ ৫১ শতাংশ এগিয়েছে। যা চট্টগ্রাম প্রান্তের নেভাল একাডেমি থেকে শুরু হয়ে সড়কের কালাবিবি দীঘি নামক স্থানে মিলিত হবে। এই টানেলটি ওয়াইজংশন-আনোয়ারা সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ফলে এই সড়কটি কর্ণফুলী টানেল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের সংযোগ সড়ক হিসাবে কাজ করবে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানমুখী ভারি ও হালকা যানবাহন এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার থেকে আসা হালকা ও ভারি যানবাহনগুলো এন-১ হয়ে এই ওয়াইজংশন-আনোয়ারা সড়ক ব্যবহার করে টানেলে প্রবেশ করবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, বর্তমান সড়কটি দুই লেনের হওয়ায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে কর্ণফুলী সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের টাইপ ডিজাইনের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত ডিপিপির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ডিজাইন ইউনিট থেকে সড়কের নকশা সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিজাইন ইউনিট থেকে পাওয়া ডিজাইনে স্লো মুভিং ভেহিকুলার ট্রাফিক (এসএমটিভি) লেনসহ ছয়লেন এবং এজন্য সড়কের পেভমেন্টের প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৬ মিটার, যা আগে ছিল ১৮ দশমিক ৮ মিটার।
আনোয়ারায় টানেলের মুখ থেকে বাঁশখালী ও পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত চারলেন সড়কের নির্মাণকাজ এখনই শুরু হলে সুড়ঙ্গ পথের সুফল দ্রুত পাওয়া যেত বলে দাবি করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা। বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কটি হলে বন্দরনগরীর সঙ্গে সৈকতের জেলা কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার কমত।
এএস/এসএস