কর্ণফুলী গ্যাসের শীর্ষপদে এতো ‘মধু’, মেয়াদ শেষেও কর্মস্থল ছাড়ছেন না এক ব্যবস্থাপক

প্রেষণের মেয়াদ শেষ হলেও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ছাড়ছেন না কাস্টমার মেইনটেন্যান্স উত্তর শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আব্দুল কুদ্দুছ। তিন বছর আগে কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে প্রেষণে তাকে এখানে বদলি করা হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৮ দিন পরও তিনি কেজিডিসিএলে বলবৎ আছেন।

তবে মো. আব্দুল কুদ্দুছের দাবি তার প্রেষণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তিনি এর সপক্ষে কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।

অভিযোগ রয়েছে, কেজিডিসিএলের অধিকাংশ সময় আব্দুল কুদ্দুছ সন্ধ্যার পরও অফিস করেন। ওই সময় গ্যাসের নানা সমস্যা, গ্যাসের লাইনের রেগুলেটর মেরামত, গ্যাস কম পাওয়ার অভিযোগসহ যন্ত্রপাতি পরিবর্তন করার নামে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা।

কিন্তু সরকারি চাকরি বিধিতে বলা হয়েছে, প্রেষণের সময়কাল তিন বছর। ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া, চাকরির মেয়াদ তিন বছরের অধিক হবে না।

এদিকে একই কোম্পানিতে চাকরি করেন তার স্ত্রী আরিফা আক্তারও। আরিফা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা না থাকার সত্ত্বেও চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পান দুদক চট্টগ্রাম-২ এর সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। পরে তার অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে কমিশন বরাবরে মামলার সুপারিশ করেছিলেন দুদকের এই কর্মকর্তা। বর্তমানে আরিফা আক্তার কেজিডিসিএলের পরিকল্পনা বিভাগের উপব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

জানা গেছে, ২০০৭ সালে পেট্রোবাংলার আওতায়ধীন প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন মো. আব্দুল কুদ্দুছ। চাকরিতে যোগদানের সময় তার শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান ডিপ্লোমা পাস।

Yakub Group

অভিযোগে রয়েছে, চাকরির পর অনুমতি না নিয়ে পড়াশোনা করে গোপনে স্নাতক ডিগ্রি পাস করেন আব্দুল কুদ্দুছ। পরে সেই সার্টিফিকেট পরিচালককে ‘ম্যানেজ’ করে কেজিডিসিএলে জমা দেন তিনি। একই কায়দায় বাগিয়ে নেন দুটি পদোন্নতি।

অথচ নিয়ম অনুযায়ী চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর পরবর্তীতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে হলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিস আদেশের মাধ্যমে অনুমোদন নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর পদোন্নতি পেয়ে উপব্যবস্থাপক হন প্রকৌশলী মো. আব্দুল কুদ্দুছ । ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট এক অফিস আদেশে কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে তাকে প্রেষণে বদলি করা হয় কর্ণফুলী গ্যাসে। এরপর গত ৩০ আগস্ট মো. আব্দুল কুদ্দুছসহ তিনজনকে ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয় কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর তার প্রেষণের মেয়াদ তিন বছর ১ মাস ৮ দিন পূর্ণ হয়। সেই হিসেবে তিনি নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্মস্থলে ৩৮ দিন বেশি ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের কাস্টমার মেইনটেন্যান্স উত্তর শাখার ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আব্দুল কুদ্দুছ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। আমার প্রেষণের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

আপনার প্রেষণের মেয়াদ বাড়িয়েছে এমন প্রমাণ দিতে পারবেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে কর্মস্থলের বাইরে, অফিসে আসলে দিতে পারব।’ পরে তিনি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি।

এই বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. শাহীনুর ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে আরও কয়েকবার কল দিলে মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!