কর্ণফুলীর নিচে লুকানো দুই বাল্কহেড খুঁজতেই হিমশিম বাকলিয়ার পুলিশ
পাপ্পীর আস্তানায় দুদিনের অভিযানও নিস্ফল
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী মনছুর আলম পাপ্পীর আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এক সাবেক মেরিন কর্মকর্তার বালু উত্তোলন সরঞ্জাম উদ্ধারের জন্যই আদালতের নির্দেশে এ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযানে গিয়ে সরঞ্জাম উদ্ধারে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে অন্তত দুটি বাল্কহেড কর্ণফুলীর নদীর পানির নিচে ডুবিয়ে রাখেন তিনি— এমন জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৩১ আগস্ট) ও বৃহস্পতিবার দুদিন অভিযান পরিচালনা করেও পুলিশের পক্ষে কোটি টাকার এ সম্পদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, সাবেক মেরিন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান অবসরের পর পিএসপি মেরিন সার্ভিসেস নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন। যার মাধ্যমে বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানসহ নিজের পরিবারের অস্থিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। সে প্রতিষ্ঠানের এমবি আফিয়া ইবনাত ও এমবি বন্নি (১২ ইঞ্চি আনলোডিং এবং লোডিং ড্রেজার) এমবি ওয়াস্তাবির-২ ও এমবি নিলয় ফায়াজ নামে দুটি বাল্কহেড ড্রেজারসহ আনুসাঙ্গিক ইক্যুইপমেন্ট ভাড়ার চুক্তি হয় পাপ্পীর সঙ্গে। কিন্তু সেসব যন্ত্রাংশ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অযত্নে ফেলে রাখেন তিনি।
চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী, দৈনিক ২৫ হাজার ঘনফুট বালি সরবরাহ করা হবে মর্মে প্রতি ঘনফুট বালির জন্য ২ টাকা ৩০ পয়সা ভাড়া মূল্য নির্ধারণ করা হয় এসব যন্ত্রাংশের। যা প্রতি মাসে ১৭ লাখ টাকার বেশি।
চুক্তি অনুযায়ী, পূর্ব পরিচয়ের কারণে জামানত ছাড়াই এসকল ইক্যুইপমেন্ট ভাড়াই লাগান সাবেক মেরিন কর্তা। আট লাখ টাকা যন্ত্রাংশ মেরামত বাবদ পরবর্তী সময়ে খরচে সমন্বয় করার কথা। এরপর একই বছরের ৭ অক্টোবর এমভি মরিয়ম নামে আরেকটি আনলোডিং ড্রেজার পাইপসহ ১ টাকা মূল্যে ভাড়ার চুক্তি হয়। সর্বমোট ১২ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ৪০ ফুটের ৯৮টি পাইপ তাকে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন কেএম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এক মাস পর থেকে এসব ইকুইপমেন্টের কাজ শুরু করার কথা থাকলেও তিনি চার মাস পর কাজ শুরু করেন। তাও দুটি ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করে দৈনিক টাকা তুলে নিয়ে যেতেন। আমাদের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি কোনো পেমেন্ট আমাকে করেননি।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় গত ১০ মাসে আমার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার ২৮০ টাকার ক্ষতি হয়। গত ৯ মে পাঁচটি ইক্যুইপমেন্টের মধ্যে তিনটি ফেরত চেয়ে নোটিশ পাঠায়। কিন্তু তিনি এর কোনো সদুত্তর দেননি। তাছাড়া ব্যাবসায়িক বৈঠকে বসলে পাপ্পী তার সহচরদের বলেন, ‘ঢাকা যাওয়ার জন্য অস্ত্র, গোলাবারুদ গাড়িতে লোড কর।’ এসব বলে তিনি ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেন।
এসব বিষয়ে আদালতে মামলা করেন ক্যাপ্টেন হাফিজ। বাকলিয়া থানার তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালত এসব যন্ত্রাংশ ক্রোক করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তাছাড়া পাপ্পিকে গ্রেপ্তার আদেশও দেন।
গত বুধবার সারাদিন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন বাকলিয়া থানা পুলিশ। এতে সহায়তা করেন বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও থানা পুলিশ। তবে দু’দিন পেরিয়ে গেলেও সব যন্ত্রাংশ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কারণ পাপ্পী আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এসব যন্ত্রাংশ এমন কায়দায় রেখেছেন যা উদ্ধার করতে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ উপ পরিদর্শক একেএম জালাল উদ্দিন।
আরএস/ডিজে