কর্ণফুলীর ক্যান্সার রোগী করোনা পেলেন কি হাসপাতাল থেকেই?

চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী থানার ইছানগর গ্রামের করোনা আক্রান্ত মহিলার তিন ছেলের দুজনই প্রবাসী। দুজনের কারোরই কয়েক বছর ধরে দেশে পা পড়েনি। চার মেয়েই রয়েছেন শ্বশুরবাড়ি। স্বামী ডকইয়ার্ডের কাজ ছেড়েছেন ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে। ছোট ছেলে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী, তিনি লকডাউনের শুরু থেকেই ঘরবন্দি। এখন প্রশ্ন রয়েই যায়, কার সংস্পর্শে এসেছেন ওই মহিলা? নাকি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েই জব্দ হলেন করোনাভাইরাসে?

সোমবার (২৭ এপ্রিল) করোনা আক্রান্ত ৬৫ বছর বয়সী ওই মহিলার বাড়ি পড়েছে ইছানগরে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ভুগছেন ক্যান্সারে। এ রোগের চিকিৎসা নিতেই ১৫ এপ্রিল অনকোলজি বিভাগের অধীনে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের ৪১৮ নম্বর কেবিনে। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে থেকে ২৬ এপ্রিল ইছানগরের নিজ বাসায় আসেন।

বাসায় আসার পর পাড়াপড়শীদের অনেকেই দেখতে গেছেন। দেখতে এসে কিছু আত্মীয়স্বজন রাত্রিযাপনও করেছেন। এমনকি মা ও শিশু হাসপাতালে থাকা অবস্থায় ওই রোগীকে দেখতে গিয়েছিলেন এক আত্মীয়, কেবিনে ছিলেনও তিনি কয়েকদিন। আর বাকিটা সময়ই তার ছোট ছেলে সার্বক্ষণিক সঙ্গে ছিলেন। মেডিকেল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ভাড়া করা ক্যাবে করে নিজ বাসা আনা হয় ক্যান্সারে ভোগা সেই মহিলাকে।

জানা যায়, সাড়ে তিন মাস ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। কয়েকদিন ধরে ক্যান্সারের কারণে ব্যথা ও প্রেসার লো হয়ে যাওয়ায় ১৫ এপ্রিল তাকে মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর কিছুটা সুস্থ হলেও ১৭ এপ্রিল মেডিকেল থেকে স্যালাইন দেওয়ার পর থেকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর উন্নতি না দেখে করোনা ভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠায়। তবে সেই পরীক্ষা ফলাফল আসতে দেরি হওয়া ছাড়াও রোগীর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখে রোববার (২৬ এপ্রিল) রিলিজ দেওয়ার পরদিনই ফৌজদারহাটের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাব থেকে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়।

পজিটিভ আসার পর ইছানগর গ্রামের নিজ বাসা সিভিল সার্জন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই মহিলাকে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। প্রশাসনের লোকজন এসে ওই মহিলার বাড়ির আশেপাশের ২০ বাড়ি ও ডকইয়ার্ডসহ একটি রিক্সার গ্যারেজও লকডাউন করে দেয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য মা ও শিশু হাসাপাতালে ভর্তি হওয়া ওই রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখে নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। সোমবার সেই নমুনা পজিটিভ পাওয়া যায়। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার কারণে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে নিজ বাসা থেকে তাকে জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইসমাইল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ইছানগরে করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়ার পর সিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে আমাদের জানানো হলে রাতে সাড়ে তিনটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই রোগীকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়। সেই সাথে আক্রান্তের বাড়িসহ আশপাশের ২০ বাড়ি, অটোরিকশার একটি গ্যারেজ ও ডকইয়ার্ড লকডাউন করা হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!