করোনা পরীক্ষার ফি নেওয়া সংবিধানসম্মত নয়

প্রাণঘাতী করোনা শনাক্তের পরীক্ষার ফি গ্রহণের নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। শনিবার (৪ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চরম অব্যবস্থাপনা ও অপ্রস্তুতির মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা শুরু হয়। পরীক্ষায় কিট সংকট, ল্যাবগুলোতে জনবল সংকট, ১৫-২০ দিন পর পরীক্ষার ফল প্রদান, লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পরীক্ষা দিতে না পারা, রেজাল্ট পেতে বিড়ম্বনা, পরীক্ষার ফলে নানা ত্রুটি, একজনের ফলাফল আরেকজনের নামে ইস্যু করা, চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য পিপিই ও মাস্ক সংকট, পিসিআর মেশিন সংকট, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স সংকট, রোগী ভর্তি করছে না। তাছাড়াও অক্সিজেন, আইসিইউ, সাধারণ বেড এবং সর্বোপরি কোভিডের সাথে জড়িত ওষুধের আকাশচুম্বী দাম ও বাজার থেকে উধাও।’

ক্যাব নেতারা বলেন, ‘বহুবিধ সংকটের মধ্যে দিয়ে দেশে কোভিড চিকিৎসা চলছে। আর যেখানে টেস্ট করাতে ও ফলাফল পেতে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই সেখানে এই অব্যবস্থাপনা দূর না করে হঠাৎ করে সাধারণ রোগীদের কোভিড পরীক্ষায় ফি নির্ধারণ করলেন সরকার। বিষয়টি দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের নাগরিকদের চিকিৎসা ও মহামারিকালে যাবতীয় সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।’

তাই অবিলম্বে কোভিড পরীক্ষার ফি গ্রহণের নির্দেশনা বাতিল করে পরীক্ষা ও চিকিৎসায় যাবতীয় জটিলতা দূর করে রাষ্ট্রের নাগরিকদের সংকটকালীন জরুরি এই চিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি জানায় ক্যাব চট্টগ্রাম।

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, মহামারির কঠিন দুর্যোগে একদিকে মানুষ কর্মহীন, আয়-রোজগার হারিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে দারুণভাবে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সেখানে টেস্টের ফি সাধারণ রোগীদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সরকার একদিকে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কোভিড আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৮-১০ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর সংকটকালীন রাষ্ট্র নাগরিকদের বিপদে পাশে না থেকে উল্টো পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ফি নির্ধারণ শুধু অমানবিক নয়, অগ্রহণযোগ্য ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাছে আশা করা যায় না।’

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘রাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, পেশাজীবীদের জন্য পৃথক চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হলেও সাধারণ রোগীদের ভাগ্য সেই জরাজীর্ণ সরকারি হাসপাতাল ছাড়া কিছুই নেই। সেখানে আবার ভিআইপি, ভিভিআইপি নামে সব সুবিধা উপরতলার মানুষ দখল করছে। চিকিৎসা সর্বজনীন না হলে এ অবস্থার পরিত্রাণ নেই।’

বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ‘করোনার মহামারিকালে সরকারপ্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনে ২০ ঘণ্টা পরিশ্রম করে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে অবিরাম পরিশ্রম করছেন। আর সেখানে সরকারের একশ্রেণির কর্মকর্তা নানা ফর্মুলা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি বাড়াতে ফন্দি-ফিকির করছেন, যা প্রধানমন্ত্রীর কঠিন পরিশ্রম ও ত্যাগকে ম্লান করার জন্য নীলনকশা কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন, ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কে এন এম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!