করোনা টিকার দেড় কোটি সিরিঞ্জ নিয়ে গেল ইন্দোনেশিয়া, ২৬ লাখ যাবে পাকিস্তানে

দেশের সবার জন্য সিরিঞ্জ বানাতে লাগবে ৫ মাস

করোনার টিকা দেওয়ার কাজে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ থেকে দেড় কোটি সিরিঞ্জ নিচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। চিকিৎসা সরঞ্জাম খাতের দেশীয় প্রতিষ্ঠান জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেড বিশেষ ধরনের এই সিরিঞ্জ সরবরাহ করছে। সবশেষ চালানে ৬৯ লাখ পিস সিরিঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজে তোলা হল মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর)।

জানা গেছে, জেএমআই গ্রুপ মিয়ানমার, ভুটান, ইউরোপ-উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশ ও ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ৩৬টি দেশে বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী রপ্তানি করে থাকে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস নামের প্রতিষ্ঠানে রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বিনিয়োগ।

জানা গেছে, দেশে এই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারও করোনার টিকা দেওয়ার উপযোগী সিরিঞ্জ উৎপাদনের সক্ষমতা নেই। মাত্র পাঁচ মাস সময়ের মধ্যে দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য টিকা দেওয়ার সিরিঞ্জ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের— এমন তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

দেশে করোনার টিকা দেওয়ার উপযোগী সিরিঞ্জ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কেবল জেএমআইয়ের।
দেশে করোনার টিকা দেওয়ার উপযোগী সিরিঞ্জ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কেবল জেএমআইয়ের।

এ প্রসঙ্গে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের প্ল্যান্ট ম্যানেজার আব্দুল মজিদ বলেন, ‘করোনার টিকা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহার করা হয় অটো ডিজেবল (এডি) সিরিঞ্জ, বাংলাদেশে যার একমাত্র উৎপাদনকারী জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় নানা দেশ থেকে ক্রয় প্রস্তাব পাচ্ছি আমরা। ইন্দোনেশিয়াতে দেড় কোটি সিরিঞ্জ বিক্রির মাধ্যমে এরই মধ্যে রপ্তানি শুরুও হয়েছে। প্রায় ২৬ লাখ একই ধরনের সিরিঞ্জের ক্রয়াদেশ পেয়েছি পাকিস্তান থেকে। এছাড়াও অন্যান্য দেশের সাথে দর নির্ধারণের আলোচনা চলমান রয়েছে।’

তিনি জানান, ‘গত ৩ ডিসেম্বর প্রথম চালানের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে ৮১ লাখ সিরিঞ্জ পাঠানো হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর দ্বিতীয় চালানের মাধ্যমে বাকি ৬৯ লাখ সিরিঞ্জ জাহাজে তোলার কাজ শেষ হয়েছে।’

প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স বিভাগের প্রধান মঈনুল ইসলাম বললেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের কারখানা একদিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নিয়ম মেনে কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই কারখানা চালু রেখেছি। ২০১২ সাল থেকে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস-এর রয়েছে আন্তর্জাতিক মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইএসও-এর সনদ— যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ বছরই করোনার টিকা কার্যক্রমে ব্যবহৃত এডি সিরিঞ্জ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাতের অনুমতির পূর্বশর্ত (সিই০০৬৮ সনদ) নিয়েছি আমরা। পণ্যের মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিচ্ছি না আমরা।’

জেএমআই এই মুহূর্তে দিনে বানাতে পারে ১২ লাখ সিরিঞ্জ।
জেএমআই এই মুহূর্তে দিনে বানাতে পারে ১২ লাখ সিরিঞ্জ।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইপিআইসহ সরকারের নানা ধরনের টিকা প্রদান কার্যক্রমে সিরিঞ্জ সরবরাহ করছে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস। এই মুহূর্তে রপ্তানি কার্যক্রম চালালেও দেশের প্রয়োজনে অগ্রাধিকার দিয়ে সিরিঞ্জ উৎপাদনে তৈরি থাকার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের পরিচালক (কারখানা) গোলাম মোস্তফা জানান, ‘দেশে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এন্ড ইমুনাইজেশান (জিএভিআই) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। আমরা সরকারের এই সফলতার অংশীদার হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত ১৩ বছর ধরে দেশে আমদানি বিকল্প অটো ডিজেবল (এডি) সিরিঞ্জ উৎপাদন করে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করে আসছি। দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচির জন্যও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অটো ডিজেবল (এডি) সিরিঞ্জ সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত আছি আমরা।’

সবশেষ চালানে ৬৯ লাখ পিস সিরিঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজে তোলা হল।
সবশেষ চালানে ৬৯ লাখ পিস সিরিঞ্জ ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশ্যে জাহাজে তোলা হল।

তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা দিনে ১২ লাখ সিরিঞ্জ বানাতে পারি। সেই হিসাবে মাসে তিন কোটি ৬০ লাখ। তাই আমাদের মাত্র পাঁচ মাস সময় দিলে আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য করোনার টিকা দেওয়ার সিরিঞ্জ তৈরি করে দিতে পারবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!