করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের ৪৩ কর্মী। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন কর্মী। কঠোর লকডাউনে চট্টগ্রাম বন্দর চালু থাকায় থাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছিল কর্মীদের মধ্যে। কোভিডে প্রাণ হারানোর মধ্যে বন্দর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী, হাসপাতালের ডাক্তার, যান্ত্রিক বিভাগের প্রকৌশলীসহ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাও রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য শিপমেন্ট ও ডেলিভারির জন্য বন্দরের ইয়ার্ডে ভেতরে প্রতিদিন প্রবেশ করছেন কয়েক হাজার সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-ট্রেইলরচালক ও শ্রমিক। এছাড়াও বন্দরে কাজ করছেন ৭ হাজার কর্মী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলরচালকরা বন্দরে প্রবেশ করছেন, আবার বিদেশী জাহাজের নাবিক কর্মচারীদের সংস্পর্শ হচ্ছে বন্দরেই। এতে ছড়াচ্ছে দ্রুত সংক্রমণ।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে বন্দরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকলেও সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন কর্মীরা। তাঁরা দেশের অর্থনীতির জন্য সম্মুখ সারির যোদ্ধা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বন্দরকর্মীদের করোনাকালীন সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা না করায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বন্দর সিবিএ নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডাক্তার মোশাররফ হোসেন জানান, কোভিড পজেটিভ হয়ে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের ৪৩ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, সংক্রমণের শুরু থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১২ হাজার ১১৬ জনের। এর মধ্যে পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত হন ১৭৩৭ জন। অন্যদিকে হােম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ২৪৬৩ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১১৬ জন, হােম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত ৩১১২, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত ১১৬ এবং চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠা কোভিড রােগী ১৪২৭ জন।
এ ছাড়া বন্দর হাসপাতালের আউটডােরে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রােগীর সংখ্যা ৮৮৫ জন। এ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড চালু থেকে এ পর্যন্ত ভর্তি রােগীর সংখ্যা ৭৫০ জন। হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা রোগীর সংখ্যা ৬১৩ জন। বর্তমানে করোনা ওয়ার্ডে রোগী আছেন ৬৬ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ১০ জন রোগী।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (বিএন) মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন কার্যক্রম পুরোপুরি সচল ছিল। দেশের স্বার্থেই বন্দর কর্মীরা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের নাম বন্দরে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। সরকারি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা মারা যাওয়া কমীরা পাবেন।
তিনি বলেন, করোনাকালে কর্মীদের সুরক্ষায় শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এরপর সংক্রমিত হয়েছেন কর্মীরা। কারণ প্রতিদিন প্রচুর মানুষ বন্দরে আসা যাওয়া করেন।
জানা গেছে, বন্দরের ইয়ার্ডে করোনা মোকাবিলায় যে ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা মানছেন না অনেক শ্রমিক। এতে সেখানে কর্মরত বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই পুরোদমে চালু রাখা হয় চট্টগ্রাম বন্দর। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে বন্দরের ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মারা গেছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএস মো. আবদুল মান্নান, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী রণজিৎ কুমার দে, হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের আলী আক্কাস, যান্ত্রিক বিভাগের আবদুর রশিদ মিয়াজি ও পরিবহন বিভাগের মো. আকরামুল্লাহ উল্লেখযোগ্য।
তিনি বলেন, বন্দরের ৭ হাজার কর্মী ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত কর্মস্থলে যেতে হয়। আর সেখানে বিভিন্ন লোকজনের সংস্পর্শে আসেন তাঁরা। এতে অনেকে করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়েন। এমনকি তাদের পরিবারেও ছড়ায় এ ভাইরাস।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নায়বুল ইসলাম ফটিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় পুরোদমে চালু রাখা হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই করোনায় প্রাণ দিয়েছেন বন্দরের কর্মীরা। তারা দেশের অর্থনীতির জন্য সম্মুখসারির যোদ্ধা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বন্দরকর্মীদের করোনাকালীন সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। এ ঘোষণাটা আমাদের দাবি ছিল।
সিপি