‘করোনা কি আমগো ভাত দিব, এইডা আবার কী?’

চট্টগ্রামের মোড়ে মোড়ে অভাবী মানুষের জটলা

করোনাভাইরাস কী— ওদের জানা নেই। নিরাপদ থাকার জন্য একের সঙ্গে অপরের দূরত্ব বজার রাখার নিয়মই বা কেন— সেটাও তারা জানেন না। মুখে কেন মাস্ক পরতে হবে— এ নিয়েও তাদের আছে বিস্ময়। তবে এটুকু তারা বুঝে গেছে— সামনে ঘনিয়ে আসছে নিদারুণ অভাব। ফলে ‘করোনা’র বদৌলতে ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার বাসনায় তারা আগ-পিছ না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বাধানিষেধের মাঝেও ত্রাণের অপেক্ষায় নগরীর মোড়ে মোড়ে দিনভর লেগে আছে এইসব অভাবী নারী-পুরুষের জটলা।

সোমবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর বড়পোল, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, কাস্টম মোড়, পোর্ট কলোনি, ইপিজেড বন্দরটিলা, বিশ্বরোড মোড়, পতেঙ্গা থানার আলী প্লাজা মাকের্ট এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বগুড়া জেলার বাসিন্দা খালেদা বেগম (৬০) থাকেন পতেঙ্গার মুসলিমাবাদ এলাকায়। তিনি বলেন, করোনা কী জানি না। মানুষের বাড়িতে গেলে এখন ভিক্ষাও দেয় না। কী একটা রোগ বের হল দেশে। তার জন্য বাড়িতে ঢুকতে দেয় না। বয়স্ক মানুষ। সবসময় বের হতে পারি না। গত দুইদিন ধরে রাস্তায় আছি কোন কিছু জুটে কিনা এই আশায়।

‘করোনা কি আমগো ভাত দিব, এইডা আবার কী?’ 1

হুইল চেয়ারে বসে ত্রাণসামগ্রীর আশায় অপেক্ষা করছেন পঞ্চাশোর্ধ এক লোক। তিনি ভোলা জেলার বাসিন্দা হলেও থাকেন স্টিলমিল এলাকায়। তিনি বলেন, রাস্তায় আগের মতো লোকজন নেই। করোনার কারণে এখন তেমন ভিক্ষাও পাই না। জানি এটি একটি ভয়ানক রোগ। কিন্তু কী করার আছে, ঘরে বসে থাকলে তো কেউ খাবার দেবে না।

নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘করোনা কি আমগো ভাত দিব, এইডা আবার কি? দুইদিন ধরে মানুষের ধারে ঘুইরা ঘুইরা কোন ভিক্ষা পাই না। সবাই বাসা-বাড়ির বাহির থেকে তাড়িয়ে দেয়। হুনছি ট্রাকে ট্রাকে চাইল দিতাছে বড় মানুষরা। আমিও সাহায্যের লাইগা অপেক্ষা করছি।’

মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (বন্দর জোন) হামিদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করছে পুলিশ। নগরীর যেখানেই লোকজন জড়ো হচ্ছে পুলিশ সরিয়ে দিচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না থাকতে বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে। দেশের স্বার্থে, নিজেদের স্বার্থে সবাইকে তো নিয়ম মানতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকেই তা মানছে না। কিংবা মানতে চাইছে না। এক জায়গা থেকে লোকজন সরিয়ে দিলাম তো, কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখি সেখানে আবারও লোকজনের জটলা। পুলিশের পক্ষে এত বড় নগরীর সবখানে নজর রাখা কতটুকু সম্ভব?’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!