করোনায় হঠাৎ বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর হার ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের

শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ‘অস্বাভাবিক’

যখন প্রায় সবকিছুই স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বাড়ছে। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যুর হার অনেকটাই অস্বাভাবিক— ১.৩৯ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের ৩২ জনেরই বয়স ৫০-এর ওপরে। দেশে করোনা শনাক্ত রোগীদের মধ্যে এ পর্যন্ত মোট চার হাজার ৬৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের বয়স ৫০-এর বেশি।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজারের নিচে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাতে শনাক্তের হার ওঠানামা করছে ১২ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। অবশ্য নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ার বিষয় নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে।

এখন দেখা যাচ্ছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের বেশিরভাগই হাসপাতালে যাচ্ছেন একেবারে শেষ মুহূর্তে। তাদেরই বড় একটি অংশ মারা যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় মৃত্যুর বিভিন্ন ধরন পর্যালোচনা করে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগও বলছে, নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বয়স্কদের করোনাভাইরাস শনাক্ত হলেও শেষ অবস্থা না হলে তারা হাসপাতালে আসছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই উদ্বেগের। তবে আমরা গত কিছুদিনের মৃত্যু হার যদি আমরা পর্যালোচনা করি, তাহলে আমরা দেখবো সিংহভাগই ৬০ বছরের বা ৬০ উর্ধ্ব মানুষ এটাতে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশেষ করে যাদের কো-মরবিডিটি, অর্থাৎ একই সঙ্গে অন্য ধরনের রোগ রয়েছে— যেমন ক্যানসার, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি— এ সমস্ত রোগ যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রেই আমরা মৃত্যুর হারটা বেশি দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘এই মৃত্যুগুলো আমরা দেখেছি একেবারে দেরিতে তারা হাসপাতালে এসেছিল। তখন আর তাদের জন্য কিছু করার নাই। মানে শরীরের সব অর্গান ফেল করার পর তারা আসেন হাসপাতালে। তখন আসলে ডাক্তারদের করার কিছুই থাকে না।’

করোনা শনাক্ত হলেই বাড়িতে চিকিৎসা না নিয়ে বয়স্করা যেন হাসপাতালে যান— এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিই এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘যারা বয়স্ক মানুষ উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, যদি প্রমাণিত হয় যে তারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাহলে অবশ্যই অবশ্যই তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। ডাক্তাররা যদি মনে করেন, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করবেন। আর ডাক্তার যদি মনে করেন বাসায় রেখে চিকিৎসা করাবেন। সেই সিদ্ধান্ত ডাক্তার নেবেন। কিন্তু নিজে নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না।’

অধ্যাপক খুরশিদ আলম আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একথাটা বার বার বলতে চাই, বয়স্ক মানুষ বিশেষ করে ৫০ উর্ধ্ব যাদের নানা জটিল রোগ আছে, তারা কোনক্রমেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেবেন না। আমাদের হাসপাতালগুলোতে অনেক বিছানা খালি আছে। আপনারা বাড়িতে বসে না থেকে দয়া করে হাসপাতালে আসুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন।’

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবকিছুই যখন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষও এখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অন্যদিকে চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়ায় করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর হাসপাতালে যেতে বেশিরভাগ মানুষেরই অনীহা রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm