করোনার ভয় দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চট্টগ্রাম থেকে লোক পাচার

‘চট্টগ্রাম শহরে থাকলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া দরকার’— এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে প্রথমে তারা টার্গেট করা লোককে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে। এতে সফল হলে তারপর চলে দরকষাকষি— লকডাউনের ভেতরে কিভাবে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়া যায়। মিনি ট্রাকের ওপরে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ভেতরে ভর্তি করা হয় মানুষ। সেই গাড়ি চট্টগ্রামে কর্মরত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষদের এভাবেই প্রলুব্ধ করে কিছু দালাল। করোনার এই দুঃসময়ে এটাই হয়ে উঠেছে তাদের পেশা। দালালদের পাশাপাশি গাড়ির কিছু মালিক-চালকও এ কাজে জড়িত।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) রাতে নগরীর বাকলিয়া বগারবিলে এমনই এক অভিনব ঘটনা ধরা পড়লো। ওই এলাকা থেকে ত্রিপল ঘেরা মিনি ট্রাকে করে যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ গাড়িটি ধরে ফেলে। এ ঘটনায় দালালসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে যাত্রীরা ভুল স্বীকার করায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

করোনার ভয় দেখিয়ে অভিনব কৌশলে চট্টগ্রাম থেকে লোক পাচার 1

লকডাউন উপেক্ষা করে এমন সব অভিনব কৌশলে চট্টগ্রাম থেকে মানুষ বেরিয়ে চলে যাচ্ছে অন্য জেলায়। গভীর রাতে কিংবা ভোরে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিত্যনতুন কায়দায় লোকজন চট্টগ্রাম ছাড়ছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাকলিয়া বগারবিল থেকে যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় ত্রিপল দিয়ে ঢাকা একটি মিনি ট্রাক। রাতে দায়িত্বরত টহল পুলিশ বিষয়টি টের পেয়ে গাড়িটিকে থামাতে সিগন্যাল দেয়। কিন্তু গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এর একপর্যায়ে গাড়িটি পুলিশের গায়ের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার উপক্রম হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে রাস্তার দুই পাশে লাফিয়ে পড়ে। পরে পুলিশ বাকলিয়া এক্সেস রোডের পশ্চিমে ব্রিজের ওপর ব্যারিকেড দিয়ে গাড়িসহ চালককে আটক করে। পরে চালকের তথ্য মতে, গাড়ির মালিক ও ঘটনায় জড়িত দালালকেও আটক করে পুলিশ।

আটক ৩ জন হলেন গাড়ির মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সেন্দাশিলপুর মীর বাড়ির মৃত নজর আলীর ছেলে বেলাল উদ্দিন (৬৫)। বর্তমানে তিনি বাকলিয়া থানার বগারবিল এলাকার পেশকার বিল্ডিংয়ের নিচতলায় বসবাস করেন। আরেকজন হলেন গাড়ির চালক কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার পাঠশালা আমিন মেম্বারের বাড়ির আব্দুল মান্নানের ছেলে মাঈন উদ্দীন (২৫)। বর্তমানে তিনি বাকলিয়া থানার শান্তিনগর বগারবিল গাগড়া কলোনিতে বসবাস করে।

এছাড়া পুলিশ আটক করে দালাল মো. উজ্জল (৪২) ও মো. বাবলুকে (৩৫)।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে যাত্রীরা জানান, গাড়ির মালিক বেলাল এবং দালাল উজ্জল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের লোকজনকে করোনার ভয় দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে নিজ এলাকায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম শহরে করোনাভাইরাসের রোগী বেড়ে গেছে। এখানে থাকলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম ছেড়ে নিজ গ্রামে চলে যেতে বলা হয়। এ কথা শুনে অনেকে ভয়ে নিজের এলাকায় চলে যাওয়ার জন্য রাতের আধাঁরে ওই গাড়ি উঠেন। তবে পুলিশের কাছে ভুল স্বীকার করায় যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

গাড়ির চালক মো. মাঈন উদ্দীন জানান, গাড়ির মালিক বেলাল উদ্দিন ও মো. উজ্জল পরস্পর যোগসাজসে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জের বেশ কিছু লোকজনকে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। অনেকে তাদের পরামর্শে রাজি হলে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তাদেরকে এলাকায় পৌঁছানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ওসি মো. নেজাম উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে— এরকম ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি মিনি ট্রাকে করে যাত্রী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জে চলে যাওয়ার সময় গাড়ির চালককে আটক করি। পরে চালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গাড়ির মালিক ও দালালকেও আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আরএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!