করোনার কবলে পড়া ক্যান্সারের রোগীকে বাঁচালো আইসোলেশন সেন্টার
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছয় দিনেও মেলেনি অক্সিজেন
চার বছর ধরে ক্যান্সার আক্রান্ত এক বৃদ্ধা মা। হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে গেলে ভর্তি হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। করোনা পরীক্ষার জন্য পরদিন নেওয়া হয় নমুনা। পাঁচ দিন পর ফলাফল আসে পজিটিভ। এর মধ্যে টানা ছয় দিন ছিলেন সেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে ন্যূনতম অক্সিজেনটুকুও পাননি তিনি। বাইরে থেকে কিনে এনে দিতে হয়েছে অক্সিজেন। পরবর্তীতে তার চিকিৎসায় এগিয়ে আসে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের করোনা আইসোলেশন সেন্টার। ১৩ দিনের চিকিৎসা শেষে সেই মহিলা এখন করোনামুক্ত।
৫৫ বছর বয়সী সেই বৃদ্ধা মহিলার নাম রওশন জাহান বেগম। তার বাড়ী হাটহাজারী উপজেলার মেখলে। গত ১৬ জুন তিনি শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরদিন ১৭ জুন তার করোনা পরীক্ষা করা হলে ২৩ জুন ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ছয়দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে পরবর্তীতে ২৩ জুন ভর্তি হন হালিশহর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে। সেখানে ডাক্তার-নার্সদের পরম মমতা ও সেবায় ১৩ দিনের মাথায় বুধবার (১ জুলাই) সুস্থ হয়ে আইসোলেশন সেন্টার ত্যাগ করেন তিনি।
রওশন জাহানের বড় ছেলে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৬ জুন আমার মাকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরদিন তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিলে ২৩ জুন ফলাফল পজিটিভ আসে। এ সময় আমরা তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই রাখি। এ সময় আমার মায়ের শ্বাসকষ্ট ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সাধারণ অক্সিজেনও দেওয়া হয়নি। আমরা একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অক্সিজেন কিনে এনে সাপোর্ট দিয়েছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বলা হয়েছে তাদের অক্সিজেন সীমিত। একজনকে দিলে অন্যদের দেওয়া যাবে না। তারা আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে যেতে বলে।
তিনি বলেন, ‘পরে আমরা চমেকে অনেকের সাথে যোগাযোগ করে ভালো রেসপন্স পাইনি। এক পর্যায়ে মাকে হালিশহর করোনা আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবক ও উদ্যোক্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিবিড় পরিচর্যায় আমার মা করোনা থেকে মুক্ত হন।’
করোনা আইসোলেশন সেন্টারের অন্যতম উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের করোনা আইসোলেইশন সেন্টারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী ছিলেন এই খালা। তিনি হাটহাজারী মেখলের বাসিন্দা। যখন তিনি আমাদের আইসোলেইশন সেন্টারে এসেছিলেন তখন তার অক্সিজেন সিচ্যুরেশন ছিল মাত্র ৭০। আর তিনি ছিলেন মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এমন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়াটা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবুও তার সন্তানদের অনুরোধে আমরা তাকে ভর্তি নিয়েছিলাম। অবশেষে ডাক্তার, নার্স এবং স্বেচ্ছাসেবকদের চেষ্টায় তিনি বুধবার (১ জুলাই) সুস্থ হয়েছেন। নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। আমরা আনন্দিত এমন ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে আল্লাহর রহমতে সুস্থ করতে পেরেছি বলে।’
এমআইটি/সিপি