করোনাপীড়িত ইতালিতে ভালো নেই বাংলাদেশিরা

খোরশেদ আলম চৌধুরী। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই ইতালি প্রবাসী তিনি। ইতালির বেনেবেনতু এলাকায় দোকানে চাকরি করেন। কিন্তু ১০ মার্চ থেকে ওই দোকান বন্ধ। পরিবার নিয়ে তিনি ওই এলাকায় বসবাস করলেও এখন আতঙ্কে কাটছে প্রতিটি মুহূর্ত।

ইতালি থেকে খোরশেদ আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইতালিতে সুপার সপ আর ফার্মেসি ছাড়া আর কিছুই খোলা নেই। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার জন্য এ দুই ধরনের সপ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখানে রাস্তাঘাট মানুষশূন্য। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত সব দোকান বন্ধ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের অফিস আদালত আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, ইতালির বাংলাদেশ কনস্যুলার থেকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বের না হয়। কনস্যুলার থেকে তিনটি মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে যাতে ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন। মূলত এখানে সবাই আতংকে রয়েছেন।

বেসরকারি হিসাব মতে, ইতালির রাজধানী রোম, ভেনিস ও নেপোলিসহ ইতালিজুড়ে দুই থেকে আড়াই লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। এখানে বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিভিন্ন দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি করেন।

সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে মহামারি আকার ধারণ করায় বাসা থেকে বের হচ্ছেন না কেউই। কিন্তু এর চেয়েও বেশি আছেন আতংকে। অনেকেই বাসায় বসে মোবাইল ফোনে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। এমনকি ইতালির বাংলাদেশ দূতাবাসের কাজও মোবাইলে সেরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে দূতাবাস থেকেই। এর জন্য তিনটি নম্বর সংযোজন করে প্রচারপত্র প্রচার করা হচ্ছে দূতাবাস থেকে। যদি কোন প্রবাসী দেশে ফিরতে চান তাহলে মেডিকেল সার্টিফিকেট নেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে দূতাবাস।

করোনার ভয়ে ইটালির রোমে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোও সুনশান নীরবতা।
করোনার ভয়ে ইটালির রোমে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোও সুনশান নীরবতা।

সূত্রমতে, ইতালিতে একদিনেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১১ মার্চ) দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ২৪ ঘণ্টায় এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ১২ মার্চ সকাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে চার হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮০। এদের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়েছে ৬৮ হাজার ৩১৩ জন।

ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী, ১০ মার্চ থেকে ১১ মার্চের মধ্যে নতুন ১৯৬ জনের মৃত্যুর পর দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২৭ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২,৪৬২ জনে।

করোনা ঠেকাতে ইতালির উত্তরাঞ্চলকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) করে রাখার পরও এর বিস্তার ঠেকানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইতালিজুড়ে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সব ধরনের ক্রীড়া আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সময়সীমাও।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। একপর্যায়ে এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!