কমিটি নিয়ে চট্টগ্রাম উত্তরের নালিশ শুনলেন প্রধানমন্ত্রী
পাল্টায় সালাম বললেন, এগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি না
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছেও। এই ইউনিটের সাবেক নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সভানেত্রীর কাছে এসব অভিযোগ করে এলেন। তবে যাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তারা বলছেন, এসব অভিযোগকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না তারা। তাদের বিবেচনায় যা ভাল মনে হয়েছে তারা তা করেছেন। সেই বিষয়ে কে কী বলছে তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন তারা।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদ নেতার কার্যালয়ে সংসদ নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ৮ নেতা। এ সময় কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও আত্মীয়করণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিযোগ করেন তারা। জানান, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ উদ্ধারে এখানকার ‘সবচেয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগী’ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন এই কমিটি করা হয়েছে। তাছাড়া রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকার পরও নেতাদের ব্যাবসায়িক পার্টনার, কর্মচারী, আত্মীয়সহ নানা বিবেচনায় অনেককে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদেও রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
জানা গেছে, দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা এই সাক্ষাতে এই প্রতিনিধিদলের অভিযোগগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্ট নেতাদের ভূমিকার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। এসব অভিযোগ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন ওই ৮ নেতাকে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে অংশ নেওয়া নেতারা হলেন নুরুল হুদা, গিয়াস উদ্দিন, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, ইউনুছ গনি চৌধুরী, তৌহিদুল আলম বাবু, এসএম আবু তৈয়ব, শাহনেওয়াজ চৌধুরী এবং এসএম বাকের।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অযোগ্য আর হাইব্রিড অনেককে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এসব খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত, আমরা এসব প্রত্যাশা করিনি। কারণ উত্তর চট্টগ্রামে সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন অভিভাবক আছেন জননেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি থাকতে এমন কিছু হবে আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা উনাকে আমাদের অভিযোগগুলো জানিয়েছি। তিনি আমাদের কথাগুলো শুনেছেন।’
সাক্ষাতের বিষয়ে ইউনুস গণি বলেন, ‘আমরা পদে থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমরা নেত্রীকেও এটি বলেছি যে আমরা আজীবন আপনার কর্মী থাকতে চাই। আপনি জানেন আমাদের কী করবেন। আমাদের কোথাও না রাখলেও আমাদের কোন আফসোস থাকবে না। আজ যে পরম মমতায় আপনি আমাদের অভিযোগ শুনেছেন তাতেই আমরা কৃতজ্ঞ।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন ‘আমরা নেত্রীকে আমাদের অভিযোগ জানিয়েছি। অতীতে মোশাররফ ভাই কমিটি করে পাঠালে সাথে সাথে অনুমোদন হয়ে যেতো। এবারই প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় কমিটির অনুমোদন আটকে গেল। বিষয়টি নেত্রী গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন বলে এমনটি হয়েছে। এটাই আমাদের অর্জন ও প্রাপ্তি।’
এর আগেও সম্মেলনের পর পর এক দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন তারা। সেসময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথেও সাক্ষাৎ করেন তারা।
এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কোন বক্তব্য নাই। এগুলোকে আমরা ওই রকম গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের বিবেচনা আমরা করছি, এগুলো নিয়ে কে কী বললো… কতো জনে কত কথা বলবে। এগুলোর বিপরীতেও আমাদের কথা আছে। আমাদের যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রশ্ন করে তাহলে দেওয়ার মত জবাব আমাদের কাছে আছে। এগুলোকে আমরা গুরুত্বই দিচ্ছি না।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘আসলে আমাদের সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয় এগুলো। এগুলো নিয়ে পাল্টাপাল্টি করার অভিপ্রায় আমার নেই। এই বিষয়ে কথা বলা তাই সমীচিন মনে করছি না।’
সিপি