‘কমিটি গঠন’, প্রশ্নের মুখে চট্টগ্রাম উত্তর আওয়ামী লীগ

দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দুই সদস্যের কমিটি নিয়েই চলছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এর প্রভাব পরছে জেলার আওতাধীন ইউনিটগুলোর রাজনীতিতে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জেলার আওতাধীন ৭টি উপজেলা শাখার ৪ উপজেলাতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, এর বাইরে একটি কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে বছর খানেক আগে, বাকি দুটিতে পূর্নাঙ্গ কমিটি আছে।

বেশিরভাগ উপজেলা ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় এসব এলাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল রাজনীতি ঝিমিয়ে পরছে বলে দাবি একটি পক্ষের। যদি অন্য পক্ষ বলছে বর্তমান রাজনৈতিক কালচারে পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকা না থাকা সেভাবে প্রভাব ফেলছে না। এদিকে লম্বা সময় ধরে দুই সদস্য নিয়ে চলা উপজেলা গুলোতে আগের কমিটিতে থাকা ত্যাগী নেতা কর্মীদের বাদ দিতে নানারকম কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়ার অভিযোগও উঠছে এসব এলাকার নীতিনির্ধারকদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে এসব ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের স্বদিচ্ছা নিয়েও। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারার জন্য এসব উপজেলার নেতারা সামনে আনছেন জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টিকে। যদিও এটিকে লেইম এক্সকিউজ হিসেবে অভিহিত করে এর জন্য ওইসব এলাকার স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিংকেই দায়ী বলছেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

জানা গেছে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৭ টি উপজেলা ইউনিট হলো মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, সন্দ্বীপ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী।

এর মধ্যে রাউজান, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি রয়েছে। যদিও ২০১৬ সালে হওয়া ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক বছর আগে। এর বাইরে মিরসরাই, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, হাটহাজারী উপজেলায় সম্মেলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি এই চার উপজেলার। এর মধ্যে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ একটি কমিটি প্রস্তুত করে জেলাতে জমা দিয়ে সেই কমিটি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তবে এখনো সেই কমিটির অনুমোদন দেয়নি জেলা আওয়ামী লীগ। বাকি ৩ উপজেলায় রয়েছে চরম গ্রুপিং। এই তিনটির প্রতিটি উপজেলাতেই তিন ভাগে বিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি। ফলে সময় ক্ষেপন করে প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাকর্মীদের বাদ দেয়ার জন্য ফাঁকফোকর বের করতেই কমিটি গঠন দীর্ঘায়িত করছেন প্রভাবশালীরা এমনটাই অভিযোগ তৃণমূলের।

দীর্ঘমেয়াদে উপজেলা ইউনিটে কমিটি না হওয়ায় কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে মন্তব্য করে তৃনমূল নেতারা বলছেন উপজেলা কমিটি না থাকায় এসব উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নেও কমিটি নেই। ফলে তৃণমূলে বিশাল এক রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যার কারণে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুগত বা পছন্দের না হলে আগের কমিটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখা হচ্ছে।

কিভাবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে তার উদাহরণ দিয়ে সন্দ্বীপের উপজেলা কমিটির সাবেক এক নেতা জানান, গত জাতীয় নির্বাচনে এই ইউনিটের ১৭ জন সিনিয়র নেতা যার মধ্যে ১১ জন চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র রয়েছেন তারা একজোট হয়ে দলীয় মনোনয়নের প্রশ্নে বর্তমান সাংসদের বিরোধীতা করেছিলেন। এর পর থেকেই তাদের উপর নেমে আসে মামলা হামলার খড়গ। সম্মেলনের পর থেকে গত ১ বছর ধরে দলীয় কোন কর্মসূচিতেই তাদের দাওয়াত দেয়া হয়না। পরিকল্পিতভাবেই তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে রাখতেই কমিটি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি তার। জানা গেছে এই উপজেলা আওয়ামী লীগের এবারের প্রস্তাবিত কমিটিতে আগের কমিটির প্রায় অর্ধেক নেতাই বাদ পরছেন। যাদের মধ্যে আগের কমিটির সহ সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ নেতাও রয়েছেন। যারা এখনো জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজও করছেন।

ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি না থাকার কথা স্বীকার করে নিয়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আল মামুন বলেন, ‘আমাদের জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় আমরা উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছিনা। কারণ জেলায় কারা পদ পাচ্ছে সেটা সাথে উপজেলা কমিটির সমন্বয় করতে হবে। এই কারণে আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি দিতে পারছিনা।’

সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশন বলেন, ‘জেলার ওয়ার্কিং কমিটি না থাকায় উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের সুযোগ নেই। এজন্য আমরা পূর্ণাঙ্গ করতে পারিনি।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা করে সেখানে আগের কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতা কর্মীকে বাদ দেয়ার অভিযোগ থাকলেও খসড়া কমিটি করার কথা অস্বীকার করে মিশন বলেন, ‘আমরা এখনো কমিটি নিয়ে বসিওনি। জেলার কমিটি হলে আমরা কমিটি জমা দিব।’

তবে এসব কিছুকে লেইম এক্সকিউজ হিসেবে অভিহিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এগুলো খুব লেইম এক্সকিউজ। অধীনস্থ ইউনিটের কমিটি অনুমোদনের একটা ক্ষমতা আমাদের সম্মেলনের সময়েই দেয়া হয়েছে। জেলা সভাপতি সাধারণ সম্পাদক কমিটি অনুমোদনের এখতিয়ার রাখে। মিরসরাইয়ে কমিটি করে আমাদের দিয়েছে। সেটি এখন কার্যক্রমও পরিচালনা করছে। রাউজান রাঙ্গুনিয়াতেও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব রয়েছে। সেসব এলাকায় কমিটিও আছে। বাকি যেগুলোতে কমিটি নাই সেখানে একেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে ৩-৪ গ্রুপ আছে। কমিটি করাটা স্থানীয়দের দায়িত্ব। এখান যেগুলো বলা হচ্ছে এগুলো অজুহাত দেখানো বলেই আমি বলবো।

মিরসরাই কমিটি জেলা আওয়ামী লীগ এখনো অনুমোদন দেয়নি এই কথা মনে করিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের সবার অভিভাবক মোশাররফ ভাই সায় দিলে তা আর অনুমোদনের অপেক্ষা রাখেনা। ওই ইউনিটের কমিটি জেলায় জমা দেয়া হয়েছে। আমরা সেটি রিসিভ করেছি।’

অন্যদিকে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘আমাদেরও জেলা সম্মেলন হয়েছে এক বছর হয়ে গেছে। আমরা এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে পূর্নাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছি। এরপরতো করোনার কারণে অক্টোবর পর্যন্ত দলের কমিটি অনুমোদন বন্ধই ছিল। এখন সেটা শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুতই
কেন্দ্র থেকে জেলা কমিটি অনুমোদন দিবে।’

এআরটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!