কমছে বন্যার পানি বাড়ছে দুর্ভোগ, চকরিয়ায় খাবার ও পানির সংকট

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত পাঁচদিন পানি বন্দী ছিলো কক্সবাজারের চকরিয়ার লাখো মানুষ। শুক্রবার (৩০ জুলাই) থেকে মাতামুহুরী নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কমতে শুরু করেছে বানের পানি। কিন্তু পানি কমলেও নানা দুর্ভোগে পড়েছে বানবাসি মানুষ।

বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, রাস্তায় আশ্রয় নেয়া লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নলকূপগুলো কয়েকদির ধরে পানিতে ডুবে থাকায় পানি উঠছে না। এতে চরম বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে পড়েছে বন্যা কবলিত মানুষ।

ষাটোর্ধ্ব বয়সের মরিয়ম বেগম। স্বামী-সন্তান নিয়ে পলিথিন টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের পাশে। পাঁচদিন ধরে অবস্থান করছেন রাস্তায়। িএই কদিন শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছেন। বাড়িতে ফিরে চাল-ডাল একবাটিতে রান্না করে খাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। চকরিয়ার উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা মেলে এরকম অসংখ্য দৃশ্যের । এসব বন্যা কবলিত লোকজন খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, পাঁচদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়িসহ রাস্তাঘাট। বানবাসি মানুষ খুব কষ্টে আছেন। সরকারীভাবে ও বেসরকারী উদ্যোগে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা খুবই অপ্রতুল। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ বন্যায় চকরিয়া ১৮টি ইউনিয়ন ছাড়াও ১টি পৌরসভার সব কটি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি কমছে অতি ধীরে। তাই দুর্ভোগও অত্যধিক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভা থেকে পানি অনেকাংশে নেমে গেছে। কিছু কিছু সড়কের বিভিন্ন স্থানে এখনো পানি চলাচল করছে। ফলে যান চলাচল এখনো স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি। উপজেলার সাহারবিল, পূর্ব-বড়ভেওলা, বিএমচর, কোণাখালী, পশ্চিম-বড়ভেওলা, ঢেমুশিয়া এলাকায় বানের পানি এখনো কমেনি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি রাস্তা দিয়ে পারাপার করছে।

এদিকে, বন্যা দূর্গত এলাকায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, উপজেলা পরিষদ, পৌর প্রশাসন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি শুকনো খাবার, চাল-ঢাল, খিচুড়ি বিতরণ করছেন। কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা দাবী করেছেন ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। কেউ কেউ পেলেও অনেকেই পায়নি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে হিসাব করেই জানা যাবে ক্ষতির পরিমাণ। ঘর হারানো পরিবার ও ভেঙ্গে যাওয়া সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ সচলে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বন্যা দূর্গত এলাকায় খাবার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৪ টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আরো ২৮ টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

অপরদিকে, বন্যায় দূর্গত মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় চকরিয়ার উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। বন্যার কারণে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বরসহ পানিবাহিত নানান রোগব্যাধি। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে থেকেও বিশেষ ব্যবস্থায় দুর্গতদের দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচ) ডা. মোহাম্মদুল হকের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য কর্মকর্তা পলাশ সুশীল বলেন, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভার জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক টিমে একজন করে মেডিকেল অফিসার কাজ করছে।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!