কথা বলতে পারাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পাহাড়ি ময়না পাখির। পোষার জন্য শৌখিন মানুষের কাছে অন্যরকম আবেদন এ পাখির। ফলে লোভী মানুষদের শিকারে পরিণত হয়ে পাহাড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ময়না পাখি ও ছানা।
সাধারণত বড় গাছের উঁচুতে গর্তে বাসা তৈরি করে ময়না পাখি। চাহিদা বেশি ও দাম পাওয়া যায় বলে উঁচু বাসা থেকে ছানা শিকার করে নিয়ে যায় পাখি শিকারীরা। তারা এটি খাঁচায় পোষে বড় করে, পরে বেশি দামে গোপনে বিক্রি করে।
প্রকাশ্যে পাহাড়ে একটি ময়না ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এই পাখিটি বিক্রি, পাচার ও পোষা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু অর্থের লোভে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকার উঁচু গাছের গর্তে তৈরি বাসা থেকে ময়নার ছানা শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা।
দুর্গম এলাকার মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, সবুজ পাহাড়ে বন ধ্বংসের ফলে বড় বড় গাছপালা উজাড় হওয়ায় ময়না প্রজনন সংকটও দেখা দিয়েছে। ময়না মাটি থেকে পনের-বিশ মিটার উঁচুতে জীবিত অথবা মৃত গাছের গর্তে বাসা তৈরি করে ডিম দেয়। কিন্তু ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নিলেও পালক উঠার আগে বনঘেঁষা মানুষ অর্থের লোভে ছানাগুলো শিকার করে ময়নাপ্রেমীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
সিন্দুকছড়ি এলাকার ময়না বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, সিন্দুকছড়ি দুর্গম এলাকার পাহাড়িরা শিকার করে। বড় গাছের বাসা থেকে তিনটি ময়নার ছানা শিকার করে আমার কাছে নিয়ে আসে। আমি দরদাম করে কিনে নিই। সাড়ে চার মাস আগে এক পাহাড়ি যুবকের কাছ থেকে আমি চার মাস বয়সি তিনটি ময়না বাচ্চা কিনি। একটি দশ হাজার টাকা করে বিক্রি করি ঢাকার দুই জনের কাছে। আমার কাছে খাঁচায় একটি আছে সকাল-বিকেল হালকা ময়না ময়না ডাকে।
তিনি বলেন, ১০ হাজারের নিচে বিক্রি করব না। একটি ময়না দশ হাজার টাকায় বিক্রি করব। শুকনা মরিচ খাই। পাহাড়িদের বললে ময়না শিকার করে নিয়ে আসে।
খাগড়াছড়ির সৌখিন পাখির ফটোগ্রাফার সবুজ চাকমা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে পাহাড়ি ময়না খুব কমই দেখা যায়। মূলত তারা মানুষের ভাষাকে অনুকরণ করে কথা বলে বলেই মানুষ তাকে পালতে চায়। দেশের অভিজাত শ্রেণীর লোকজনের কাছে তার চাহিদা বেশি হওয়ায় পাচারকারিরা বেশি মুনাফার আশাই এই পাখি পাচার করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এটা অপরাধ। যারা পাচার করছে তারা অপরাধ জেনেই পাচার করছে। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো তৎপর হতে হবে।
পাখি, বন্যপ্রাণী গবেষক ও লেখক শরীফ খান বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে পাচারকারীরা অতিগোপনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রাচার করেন। পাহাড়ে নানান কারণে ময়না পাখি কমে গেছে। স্থানীয় জনগণকে সামাজিকভাবে এগুলো প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি পাহাড়ি এলাকা থেকে ময়না পাচার বন্ধ করা যায় তাহলে ময়নার সংখ্যা বাড়বে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বনবিভাগ খুবই চেষ্টা করে।
খাগড়াছড়ি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা ইতিমধ্যে অভিযান চালিয়ে অনেক ময়না পাখি উদ্ধার করে সংরক্ষিত বনে মুক্ত করেছি। শিকারীদের বিরুদ্ধেও ২০১২ বণপ্রাণী আইনে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হয়।
কেএস