কথার যুদ্ধে জড়িয়ে মাহতাবের বাসায় শেষমেশ অনুতাপে পুড়লেন সুজন-বাবুল

দুই নেতার অসৌজন্যমূলক বক্তব্যে দলে ক্ষোভ

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের বিরোধ ‘মিটেছে’ শেষ পর্যন্ত। আন্দোলনকে ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তার রাশ টানতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা মিলিত হলেন এক সৌজন্য বৈঠকে। বৈঠকে সিআরবি ইস্যুতে চলমান বিতর্ককে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেটা মিটিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে।

হঠাৎ কেন এমন সৌজন্য বৈঠক— এমন প্রশ্ন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে সভার আলাপের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি কেউই।

নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নগর আওয়ামী লীগের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিনকে নিয়ে সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত দুই সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজনের অসৌজন্যমূলক নানা বক্তব্য নিয়ে বেশিরভাগ সদস্যই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কেউ কেউ এ নিয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলেন। পরে অসৌজন্যমূলক বক্তব্যের জন্য ‘অনুতাপ’ প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করার পর সিদ্ধান্ত হয়, বাবুল ও সুজন নগর সভাপতি মাহতাবের কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন।’

কথার যুদ্ধে জড়িয়ে মাহতাবের বাসায় শেষমেশ অনুতাপে পুড়লেন সুজন-বাবুল 1

জানা গেছে, শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীর দামপাড়া পল্টন রোডের বাসায় এই সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকের একাধিক ছবি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে। ছবিতে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক ও সমঝোতার কোলাকুলিতে দেখা গেছে নগর আওয়ামী লীগের দুই সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ও খোরশেদ আলম সুজনকে। মূলত সভাপতি মাহতাব উদ্দিনের সঙ্গে সিআরবি আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ্য বিরোধে জড়াতে দেখা গেছে এই দুই সহ-সভাপতিকে। এছাড়া ওই বৈঠকে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, প্রচার সম্পাদক ফারুক আদনান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমানকে। ছবিতে না থাকলেও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিনও বৈঠকের অনেকটা সময়জুড়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে।

হঠাৎ কেন এমন বৈঠকে মিলিত হলেন নগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এমন প্রশ্নের জবাবে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা ওরকম সাংগঠনিক কোন বিষয় নয়। আমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলাম। গত কয়েকদিন ধরে সিআরবি ইস্যুতে আমাদের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছিল। সেই বিষয়েও আলাপ হয়েছে। বেশ আন্তরিক পরিবেশেই আমরা আলাপ করেছি।’

সভায় উপস্থিত এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘মূলত ৩১ আগস্ট নগর আওয়ামী লীগের সভা শেষে সিআরবি আন্দোলন নিয়ে মাহতাব ভাই কিছু কথা বলেছেন। এরপর তার জবাবে আন্দোলনে জড়িত নগর আওয়ামী লীগের নেতারাও কিছু কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের মতো একটা বড় দলের সিনিয়র নেতাদের এমন প্রকাশ্য বিরোধ স্বস্তিকর নয়। তাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতেই এই বৈঠক। একদম শুরুতেই বাবুল ভাই বলেছেন তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনো আক্রমণাত্মক কথা বলেননি। কিন্তু সুজন ভাইয়ের কিছু কথা নিয়ে বাইরে সমালোচনা হয়েছে। এগুলো নিয়েই আলাপ হয়েছে। আসলে এগুলো ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সামনের দিনগুলোতে যাতে এমন পরিস্থিতি না হয় সেসব নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

সভার আরেকটি ছবিতে সুজনকে হাস্যোজ্জ্বলভাবে জড়িয়ে ধরতেও দেখা গেছে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে।

তবে এই বৈঠকের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চান না বলে জানিয়েছেন সিআরবিতে হাসপাতালবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল। তিনি বলেন, ‘এটা কোন সভাও না। উনি আমাদের নেতা, বড় ভাই। উনার বাসায় আমরা যেতেই পারি।’

প্রসঙ্গত, সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরোধিতা করে চলমান আন্দোলনে নগর আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে গত ৩১ আগস্ট নগর আওয়ামী লীগের এক সভায় বিরক্তি প্রকাশ করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী। এ সময় আন্দোলনে থাকা নেতাদের দলের পদ ছাড়ার পরামর্শও দেন তিনি।

পরদিনই সিআরবিতে পাখির বাসা স্থাপনের প্রতীকী কর্মসূচি থেকে মাহতাবকে উদ্দেশ্য করে তোপ দাগেন খোরশেদ আলম সুজন। দলের পদ ছাড়তে বলার এখতিয়ার মাহতাব রাখেন কিনা সেই প্রশ্ন তুলে বার্ধক্যজনিত কারণে মাহতাবের মানসিক ভারসাম্য নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। অন্যদিকে শুরুতে মাহতাবও আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন জানিয়ে সেজন্য মাহতাব উদ্দিন পদত্যাগ করবেন কিনা এমন প্রশ্ন রাখেন এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।

নেতাদের এমন অবস্থানের রেশ ছড়িয়েছিল কর্মীদের মধ্যেও। নেতাদের পক্ষ নিয়ে কর্মীরাও এই বিতর্কে জড়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!