দীর্ঘদিন দিন ধরে কক্সবাজার পৌরসভার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৌরসভার অর্থ লোটপাট, টেন্ডারে অনিয়ম, কমিশন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বাসিন্দাদের। এর প্রেক্ষিতে পৌরসভায় অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুদক কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়ার নেতৃত্বে দুদকের একটি টিম কক্সবাজার পৌরসভা কার্যালয়ে আসে। পরে দুদক টিম পৌর ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রশাসকের রুমে বসে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের ফাইল তলব করেন।
এ সময় দুদকে অভিযুক্ত পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন উপস্থিত থেকে দুদক টিমের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ৩ ঘন্টা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে বেরিয়ে আসেন দুদক কর্মকর্তারা।
দুদকের সহকারী পরিচালক অনিক বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন সময় বহু অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা পৌরসভায় অভিযানে এসেছি। বিশেষ করে পৌর এলাকায় সড়ক বাতি লাগানো, সেখানে পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে—তা যথাযথভাবে হয়েছে কিনা কারা দায়িত্বে ছিল। এছাড়া বিভিন্ন টেন্ডারে কিভাবে কাজ হয়েছে, কারা করেছে, কত টাকার কাজ এসব বিষয়ে দেখেছি। এগুলো আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে, আমরা কিছু তথ্য নিয়ে যাচ্ছি, বাকিগুলো তলব করা হয়েছে। এর পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল চৌধুরী বলেন, দুদক আমাদের কাছে যা কাগজপত্র চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। আরও কাগজপত্র উনারা চাইলে দেব।
নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, দুদক দাপ্তরিক নিয়ম অনুযায়ী কাজ করছে। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে সহযোগিতা করবো। এখন এর বাইরে কিছুই বলতে পারবো না।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার পৌরসভার বেশ কয়েকজন কর্মচারী বলেন, পৌরসভাটি তিন জন কর্মকর্তা জিম্মি করে রেখেছে। তারা হলেন—নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন। তারা ‘ধরাকে সরা করে’ ইচ্ছামতো পৌরসভার টাকা লোটপাট করছে। ইতোমধ্যে দুদক টিমকে জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি শহরের হোটেল মোটেল জোনে ৩টি রাস্তা নির্মাণকাজের জন্য ১২ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। সেই টেন্ডারে যিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েছিল, উনাকে না দিয়ে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে চার নম্বর দরদাতা ইমু কন্সট্রাকশনকে কৌশলে দেওয়া হয়। যেটির কাজ গত এক সপ্তাহ ধরে করছে টেকপাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাঈল, চ চ রাখাইন, রিয়াদসহ বেশ কয়েকজন।
গত ৮ বছর ধরে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং গ্রাচুইটি ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করে আসছে ওই সিন্ডিকেট। তাছাড়া শহরজুড়ে নতুন করে সড়ক বাতি লাগানো কাজের টেন্ডার নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। যা তারা তিন জনেই করে আসছেন। একইসঙ্গে পৌরসভার প্রতিদিনের আয় থেকে রাসেল চৌধুরী একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করে খুবই অল্প টাকা ব্যাংকে জমা দেয়। এসব কিছু দুদকের তদন্তে নিয়ে আসার আহ্বান জানান বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দুদকের উপ পরিচালক সুবেল আহামদ বলেন, পৌরসভার বিষয়ে অনেক অনিয়মের কথা শুনে যাচ্ছিল। সব কিছু যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিজে