কাণ্ডজ্ঞানহীন খোঁড়াখুড়ি/ ওয়াসা-সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতিতে মানুষের দুর্ভোগ

0

চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র খোঁড়াখুড়ির কাজ করেই যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। তবে খোঁড়াখুড়ির পর রাস্তা মেরামতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। কাটা রাস্তা ঠিকমতো মেরামত না করায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে যানবাহন। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে নগরবাসী। দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগও রয়েছে।

খোঁড়াখুড়ির পর রাস্তা ঠিকমতো মেরামত না করায় আজ মঙ্গলবার (২৫ জুুন) সকালে নগরীর জামালখানের চেরাগী পাহাড় মোড়ে ফুলের দোকানের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বহনকারী একটি বাস। চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাসটি ওয়াসার খোঁড়া গর্তে দেবে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চেরাগী পাহাড় মোড়ে ওয়াসা রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কাজ করে। কিন্তু কাটা সড়ক কাজ শেষে সঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি। সড়কে বালি ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি। ফলে একটি বাস বালির গর্তে দেবে যায়। দুুপুুর আড়াইটা পর্যন্ত বাসটি রাস্তায় পড়ে ছিল।

s alam president – mobile

আক্তার হোসাইন নামে এক পথচারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার অবহেলা ও অসচেতনতার কারণে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ চরমে। জামালখানের চেরাগী পাহাড় মোড়ে মোমিন রোডে কাজ শেষ করে গর্তগুলোতে বালি দিয়ে চলে যায়। ওয়াসার কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের ফলে আজ চট্টগ্রাম নগরীর প্রতিটি সড়ক নরকে পরিণত হয়েছে। তারপরও ওয়াসার এমডি সাফল্যের গান শোনাবেন! ওয়াসার এমন কাণ্ড জনগণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।’

জাহাঙ্গীর আলম নামে এক পথচারী বলেন, ‘গত রাতে চেরাগী পাহাড় মোড়ে ওয়াসা রাস্তা সংস্কার করেছে। কিন্তু ভরাট ঠিকভাবে না করায় একটি গাড়ির চাকা দেবে গেছে।’

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরীর রাস্তাঘাট দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কোনো সংস্থার রাস্তা কাটার প্রয়োজন হলে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়ে। এর জন্য চসিকের কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা করতে হয়। বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক রাস্তা কাটার পর তা মেরামতের দায়িত্ব বর্তায় সিটি করপোরেশনের উপর। তবে কাটা রাস্তা প্রাথমিকভাবে চলাচলের উপযোগী করার কাজটি ওয়াসাকেই করতে হবে।

Yakub Group

জানা যায়, চকবাজার কলেজ রোড, বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা, সিরাজউদ্দৌলা রোড, কাতালগঞ্জ, অক্সিজেনসহ নগরীর প্রায় অধিকাংশ রাস্তা খোঁড়াখুড়ির কাজ করছে ওয়াসা। বাদ যাচ্ছে না অলিগলির রাস্তাও।

রাস্তা কাটার পর জনসাধারণের দুর্ভোগ রোধে চট্টগ্রাম ওয়াসাকেই তৎপর হতে হবে বলে মনে করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু প্রকল্পের জন্য ওয়াসা রাস্তা কাটছে। এতে পানি প্রাপ্তি সহজলভ্য হবে। কাটার পর প্রাথমিকভাবে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করার কাজটি করা ওয়াসার দায়িত্ব। পানি সরবরাহের কাজটি নিশ্চিত হলে ওয়াসা ক্লিয়ারেন্স দিলে রাস্তা স্থায়ীভাবে মেরামতের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। দুুইয়ের মাঝখানে একটি সংকট তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে ওয়াসাকেই তৎপর হতে হবে। ওয়াসার কাজটি সঠিক হলে দুুর্ভোগ কমবে।’

রাস্তা কাটার পর জনদুর্ভোগের জন্য সিটি করপোরেশনকেই দায়ী করেছেন চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কাটার পর রাস্তা সংস্কারের জন্য সিটি করপোরেশনকে অর্থ পরিশোধ করে ওয়াসা। কিন্তু রাস্তা মেরামতে সিটি করপোরেশন কালক্ষেপণ ও গড়িমড়ি করে। এটি দুঃখজনক। এর ফলে নগরবাসী দুর্ভোগে পড়েন। সিটি করপোরেশন তার কাজটি দ্রুত শুরু করলেই দুর্ভোগ কমবে।’

কাটা রাস্তা মেরামতে অবহেলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, ‘আমরা রাস্তা কেটেছি জানলেন কিভাবে?’

পরে তিনি বলেন, ‘রাস্তা কাটার পর আমরা প্রাথমিকভাবে মেরামত করে দিই। এতে গাড়ির চাকা দেবে যেতেই পারে। এ রকম হলে আমরা পুনরায় মেরামত করে দেবো।’

কাটা রাস্তা মেরামতে সিটি করপোরেশনের কালক্ষেপণ করা প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে সাড়া দেননি সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কাটা রাস্তা মেরামতে কালক্ষেপণ বা গড়িমসি করে না। রাস্তা কার্পেটিংয়ের জন্য সময় দিতে হবে। মাটি সেটেল করতে হবে। মাটি ভরাট করার আগে কার্পেটিং করলে তা কোন কাজে আসবে না। সুতরাং গড়িমসি করার কোন সুযোগ নেই।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!