ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরীর মূল সড়ক থেকে অলিগলির এখন বেহাল অবস্থা। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্প ও জাইকার অর্থায়নে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের পাইপ লাইন বসানোর জন্য সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। খোঁড়া সড়ক দ্রুত সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলোতে যানজট লেগেই আছে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ওয়াসা চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় নগরে ১৬০ কিলোমিটার সড়ক কেটে পাইপ বসানোর কাজ শুরু করে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত চলবে। এই প্রকল্পের অধীনে এ পর্যন্ত ১৫৬ কিলোমিটার পাইপ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরো ৪ কিলোমিটার সড়ক কাটবে ওয়াসা। পাইপটি বহদ্দারহাট মোড় থেকে মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ,গণি বেকারি, জামালখান মোড়, নিউমার্কেট, সদরঘাট হয়ে কাস্টমস মোড় পর্যন্ত যাবে। সেক্ষেত্রে এই সড়কগুলো কাটবে ওয়াসা।
অন্যদিকে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার পাইপ বসানোর কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে ৫০০ কিলোমিটার পাইপ বসানোর কাজ সম্পন্ন করেছে ওয়াসা। সে হিসেবে এই প্রকল্পের জন্য নগরের আরো ১৫০ কিলোমিটার সড়ক কাটা হবে। প্রকল্পটি ২০২১ সাল পর্যন্ত চলবে। নগরে দুটি প্রকল্পের পাইপ লাইন একসাথে বসানোর কাজ শুরু হওয়ায় ওয়াসা প্রায় সব সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে। এতে যান চলাচলে বিঘ্নসহ ধূলোবালিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
নিয়ম অনুযায়ী নগরের সড়কের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের উপর হওয়ায় ওয়াসা দুটি প্রকল্পের পাইপ বসানোর জন্য কাটা সড়কের সংস্কারের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপর পরিশোধ করেছে। সে হিসেবে ওয়াসা পাইপ বসানোর পর সড়কের কাটা অংশে মাটি বসিয়ে দিয়ে সমান করে দেয়। সিটি করপোরেশন সড়কগুলো সংস্কার করে। ওয়াসা চসিকের সাথে সমন্বয় করে তুলনামূলক ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারে জোর দেয়। এজন্য ওয়াসা প্রতি সপ্তাহে চসিকের সাথে সভায় কাজের অগ্রগতি ও করণীয় নিয়ে আলোচনা করে। চসিক যত সড়কের দ্রুত সংস্কার করবে, তত দ্রুত সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।
নগরে সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৬ হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ১৯৮৮ সালের এক আদেশে নগরের সড়কগুলো দেখভালের ভার চসিকের উপর দেওয়া হয়। সে হিসেবে অক্সিজেন, হাটহাজারী, কাপ্তাই সড়ক ও কর্নেলহাট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীনে। মুরাদপুর মোড় থেকে মির্জাপুল পযর্ন্ত পুর্ব পাশের সড়কটির কাটা অংশে ইট ভাঙ্গা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার সামনের মোড়ে সড়ক কেটে রাখা হয়েছে। ফলে এই সড়কে যানবাহনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া সংস্কারকাজে ব্যবহারের জন্য সড়কের উপর রাখা হয়েছে ভাঙা ইটবালির স্তুপ। মুরাদপুর মোড় থেকে মির্জাপুল পর্যন্ত সড়ক যেন গ্রামীণ কোনো সড়ক। উঁচুনিচু অংশে যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায় গড়ছে দুর্ঘটনা। বিকল হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ।
কাতালগঞ্জ পার্কভিউ হাসপাতালের সামনের অংশ থেকে চকবাজার মোড় পর্যন্ত চলছে সড়কের কাজ। কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ১নং গেটের সামনে থেকে বৌদ্ধ মন্দির পর্যন্ত সড়ক দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এখানে রয়েছে বিশাল গর্ত। সড়কের পাশে পড়ে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এই সড়কও জনচলাচলে অনুপযুক্ত। চকবাজার প্যারেড কর্নারের পাশে কেয়ারির সামনের সড়কটি নতুন করে কাটা হচ্ছে। কেয়ারির সামনে থেকে প্যারেড মাঠের পশ্চিম পাশের সড়কটি ক্ষতবিক্ষত।
চট্টগ্রাম ওয়াসা বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) আগে চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন সড়কে ওয়াসা খোঁড়াখুড়ির কাজ শুরু করেছে। তৃতীয় দিন থেকে তাদের স্টিল পাইলিং করার যে মেশিন তার ভাইব্রেশনে রাস্তার ফুটপাতে আস্তর, আশপাশে বিল্ডিংয়ের আস্তরও খসে পড়ছিল। এলাকাবাসী ওয়াসার কাজে নিয়োজিতদের জিজ্ঞেস করলে তারা জবাব দিলো এখানে মাটি শক্ত তাই এমন ভাইব্রেশন হচ্ছে। আতঙ্কিত মানুষজনের ভয়ার্ত প্রতিবাদের মুখে শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটায় কিছুক্ষণ কাজ বন্ধ রাখলেও পরে আবার কাজ শুরু করে।
জামালখান মোড় থেকে চিটাগাং গ্রামার স্কুলের সামনের সড়কটিরও বেহাল অবস্থা। ইটের খোয়া বিছানো সড়কের দুপাশে চলছে নালা নির্মাণ। নন্দনকাননের বৌদ্ধ মন্দিরের পর থেকে বোস ব্রাদার্স পর্যন্ত সড়কটিও ভাঙাচোরা। পুলিশ প্লাজার সামনের জেসিগুহ সড়কটি কাটাকাটির পর ইটের খোয়া বিছানো হয়েছে। শহীদ মিনারের সামনের সড়কটি মুসলিম ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্স পুনঃস্থাপনের জন্য কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে পুলিশ প্লাজার সামনের সড়কে যান চলাচলের চাপ বেড়েছে। একদিকে যানবাহনের চাপ অন্যদিকে বেহাল সড়ক। নগরের প্রায় সবকটি সড়কে চলা খোঁড়াখুড়ি ও কয়েকটি সড়কের কিছু অংশ বন্ধ থাকার কারণে মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
মুরাদপুর থেকে চকবাজারগামী গাড়ি চালক রুবেল, রফিকের সাথে সাথে কথা হলে তারা বলেন, এই রোড গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। কাটাকাটির কারণে সড়কের অবস্থা করুণ। গাড়ি চালালে শরীর ব্যথা হয়ে যায়। এছাড়া গাড়ির যন্ত্রপাতি প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রী মাহিন, করিম বলেন, এই রোডে চলাচল করলে খুবই ক্লান্ত লাগে। যান চলাচলের সময় তীব্র ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়। এই দুর্ভোগ থেকে কখন মুক্তি মিলবে জানি না।
এ ব্যাপারে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন,পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য সড়ক কাটতে হচ্ছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প চলবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন,নগরের সড়কগুলোর দেখভালের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের উপর। আমাদের অধীনের সড়কগুলো আমরা দেখভাল করি।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম বলেন, ওয়াসা নগরের অনেক সড়ক কাটছে।মানুষের জন্য পানির দরকার, আবার সড়ক কাটায় মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে। আমরা জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে দ্রুত সংস্কার করছি। দ্রুত সংস্কার করতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সিএম/সিআর