ওয়ার্ড নয়, চট্টগ্রামে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ছক আঁকা হচ্ছে এবার
চট্টগ্রাম নগরীতে করোনা প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক লকডাউন শুরু করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। এরই অংশ হিসেবে ১৭ জুন থেকে নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে লকডাউন কার্যকর করে প্রশাসন। জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ওয়ার্ড লকডাউন করে যেমন সুফল পাওয়া গেছে, তেমনি কিছু সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রশাসনকে। সব কিছু বিবেচনায় চট্টগ্রামে করোনা প্রতিরোধের কাজটি আরও কার্যকর করতে ওয়ার্ডভিত্তিক লকডাউনের ভাবনা থেকে সরে এসে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের নতুন ছক আঁকছেন স্বাস্থ্যখাতের সংস্থাগুলো।
২১ দিন লকডাউনের ১৪ দিনের মাথায় চট্টগ্রাম নগরীর ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫ থেকে ১৪তে নেমে এসেছে। এই ১৪ দিনে প্রায় ২০০ নমুনা দেওয়া হয়েছিল করোনা টেস্টের জন্য। প্রায় অর্ধেক নমুনার ফলাফলে এই ১৪ জন শনাক্ত হয়েছেন পজিটিভ হিসেবে। এদের মধ্যে আবার ৩ জন দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট পেয়েছেন। অপরদিকে আগের ১৪ দিনে যে ১৪৫ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৩ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা সবাই করোনামুক্ত হয়েছেন বলে জানান স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন মঞ্জু।
লকডাউনের এই সুফলে উচ্ছ্বসিত জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উত্তর কাট্টলীতে লকডাউনের মাত্র ১৪ দিনের মাথায় আক্রান্তের সংখ্যা আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। পরবর্তী লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমরা ৮ জুলাইয়ের আগেই ঘোষণা করবো। তবে এবার ওয়ার্ডভিত্তিক নয়, এলাকাভিত্তিক। করোনা প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশে উত্তর কাট্টলী ছাড়া আরও নয়টি ওয়ার্ড লকডাউন করার ঘোষণা ছিল। কিন্তু কাট্টলী লকডাউনের অভিজ্ঞতা আমরা জাতীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছি। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। আমারাও এলাকাভিত্তিক লকডাউনের ছক আঁকছি।
করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটির ৪১টি ওয়ার্ডের ১০টি লকডাউনের সুপারিশ ছিল। ওয়ার্ডভিত্তিক সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখা গেছে চকবাজার ওয়ার্ড। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ প্রায় অর্ধশত বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে চকবাজার ওয়ার্ডে। তফশিলী ব্যাংকগুলোর প্রায় সবকটির শাখাও আছে চকবাজার এলাকায়। আছে পোশাকশিল্পের বেশ কিছু কারখানাও। যে কারণে লকডাউন কার্যকরের পরিকল্পনায় একাধিকবার বসেও চকবাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তাই অপেক্ষাকৃত সহজ লোকেশনের ওয়ার্ড উত্তর কাট্টলীকে বেছে নিয়েছিল লকডাউন কার্যকরে।
উত্তর কাট্টলীর পর চকবাজার ওয়ার্ড লকডাউনের সিদ্ধান্ত ছিল। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনা প্রতিরোধে চট্টগ্রাম নগর কমিটির সদস্য মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘একটি ওয়ার্ড লকডাউন মানে বিশাল প্রস্তুতি ও জটিলতার ব্যাপার। অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়। লকডাউন কার্যকরে প্রশাসনিক জনবলের স্বল্পতাও বিবেচনা করতে হবে। আর কাট্টলী লকডাউনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা সংক্রমিত এলাকা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চকবাজার ওয়ার্ডের সব এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি পাঁচলাইশ আবাসিকে রোগী আছে। কিন্তু দেবপাহাড়ে কোন রোগী নেই। এখন পাঁচলাইশ লকডাউন হবে। দেবপাহাড় লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে দেবপাহাড়ের বাসিন্দাদেরও।’
নগর পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘উত্তর কাট্টলী লকডাউনে আমাদের থানার নিয়মিত ফোর্সের পাশাপাশি সিএমপির সদস্যরা ভূমিকা রেখেছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। দেখা গেলো পুরো ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় করোনা সংক্রমিত কেউ নেই। ওই এলাকার বাসিন্দারা লকডাউনে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। যদিও জাতীয় দুর্যোগ বলে মেনে নিয়েছেন। তবু তাদের ক্ষোভ ছিল। এখন সিদ্ধান্ত হচ্ছে আক্রান্ত রোগী যে এলাকার, সেই এলাকাটিই কেবল লকডাউন হবে। সিভিল সার্জন কার্যালয় লকডাউনের ছক তৈরিতে কাজ করছে। আমাদের হাতে সেই ছক আসলে আমরা পরিকল্পনায় বসবো। এরপর সমন্বিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লকডাউনে যাবো।’
সিপি