ওসি প্রিটনসহ পাঁচ পুলিশকে সাতকানিয়া থেকে পাহাড়ে বদলি

মিজানুর রহমান নতুন ওসি

সন্ত্রাস উপদ্রুত সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকারকে (বিপি-৭৯০৬০৯৯৩০৯) সরিয়ে দেওয়া হল অবশেষে। এর পাশাপাশি সাতকানিয়া থানার চারজন এসআই ও একজন এএসআইকেে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে বদলি করা হয়েছে। ওসি হিসেবে সাতকানিয়া থানায় পদায়ন করা হয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানকে।

ওসি প্রিটনসহ পাঁচ পুলিশকে সাতকানিয়া থেকে পাহাড়ে বদলি 1

রোববার (২৮ জুলাই) চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরেআলম মিনা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিতর্কিত এই ওসিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এই বদলি ‘শাস্তিমূলক’ বলে পুলিশসূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে রোববার (২৮ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ্ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক মিজানুর রহমানকে জনস্বার্থে সাতকানিয়া থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) পদে পদায়ন করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে— এমন কথা জানানো হয় ওই আদেশে।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত অপর এক অফিস আদেশে একসঙ্গে সাতকানিয়া থানার চারজন এসআই ও একজন এএসআইকে তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে এসআই মোস্তাক আহাম্মদকে (বিপি-৮৪১৩১৫৩১৫৭) ‘প্রশাসনিক কারণে’ খাগড়াছড়ি জেলায়, এসআই মো. রাজু আহমেদকে (বিপি-৮৬১৪০৮৮৭৪১) ‘জনস্বার্থে’ খাগড়াছড়ি জেলায়, এসআই আব্দুর রবকে (বিপি-৭২৯২০৪৩৬৬৯) ‘প্রশাসনিক কারণে’ রাঙামাটি জেলায়, এসআই মো. আলাউদ্দিনকে (বিপি-৮২০২০২১৩৬০) ‘প্রশাসনিক কারণে’ বান্দরবান জেলায়, এএসআই জহিরুল ইসলামকে (বিপি-৮৩০২০৬৪৭২৯) ‘জনস্বার্থে’ কক্সবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে।

এই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে বদলির আদেশপ্রাপ্ত জেলা বা ইউনিটে যোগদান করার জন্য চূড়ান্ত ছাড়পত্র গ্রহণ করতে আগামী বৃহস্পতিবারের (১ আগস্ট) মধ্যে রিজার্ভ অফিস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়পত্র প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় শুক্রবার (২ আগস্ট) থেকে তাদের ‘তাৎক্ষণিক অবমুক্ত’ বা স্ট্যান্ড রিলিজ করা হবে।

প্রিটন সরকার ২০২৩ সালের ১২ নভেম্বর সাতকানিয়া থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভেঙে পড়ে। প্রায়ই ঘটছিল প্রকাশ্য খুনের ঘটনা। পাড়ায় পাড়ায় গড়ে ওঠে কিশোরগ্যাং। ইয়াবা ও মাদকে ছেয়ে যায় পুরো সাতকানিয়া। এ সময়ে পুলিশ সদস্যদেরও অনেকে মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। কিশোরগ্যাংগুলোও এ সময় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায়। এমন সব ঘটনায় বারবার ওসি প্রিটন সরকার বারবার সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছিলেন অদক্ষতা ও ব্যর্থতার অভিযোগে।

একের পর এক খুন

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় এখন প্রতিদিনই ঘটছে খুনের ঘটনা। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কার্যত ভেঙে পড়েছে। গত দেড় মাসে কমপক্ষে ছয়জন খুন হয়েছেন।

১৫ জুলাই দিবাগত গভীর রাতে পুরানগড় ইউনিয়নে মোহাম্মদ মোক্তার নামে ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে কালিয়াইশ ইউনিয়নের বিওসি মোড়ের কলোনিতে ইব্রাহিম নামের এক যুবককে ছুরির আঘাতে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ওই একইদিন দিবাগত রাত ১টার দিকে পুরানগড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তর বৈতরণী দাউন্দা এলাকায় সালিশি বৈঠকে স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বেদম মার খেয়ে কামাল উদ্দিন (২৮) নামের এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। পরে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের বদলে সাতকানিয়া থানার পুলিশ আত্মহত্যাকারী যুবকের স্ত্রীকেই উল্টো গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

গত ৯ জুন বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতীপাড়া এলাকার ফজল করিম মেম্বারের গরুর ফার্মের পূর্ব পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফজল আহমদ (৫৫) নামের এক কৃষককে। ঘটনার পর হত্যাকারী সন্দেহে আবুল কাশেম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও পরবর্তী কোনো অগ্রগতি জানা যায়নি।

গত ২৯ মে রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়ার আমিলাইশ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আমিলাইশে কয়েক দফা পিটিয়ে সদ্যবিবাহিত এক পিকআপচালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মো. মহিউদ্দিন (২৫) নামের ওই পিকআপচালককে গাড়িসহ আটক করে কয়েক দফা পেটানোর পর তিনি মারা যান।

গত ২৮ মে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড সর্দারপাড়ায় ছুরিকাঘাতে মাহমুদুল হক (৩৩) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। নিহত মাহমুদুল গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। দিনেদুপুরে খুনের এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ৩ জুন চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফৌজদারি অভিযোগটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। নৃশংস খুনের এই মামলায় সাকিব প্রকাশ টোকাই সাকিব নামের এক আসামি ছাড়া আর কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm