ওরা ১১ জনের কাছে জিম্মি চান্দগাঁও ভূমি অফিস

সরকার যখন ভূমি অফিসগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য ডিজিটালাইজেশনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, তখন চান্দগাঁও ভূমি অফিসের চিত্রটা ভিন্ন। এই অফিসের কর্মকর্তাদের ১১ জনের একটি সিণ্ডিকেট দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। ঘুষ ছাড়া সেখানে কোন কাজ হয় না। ভুক্তভোগীদের অনেকে এর প্রতিকার চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে আবেদনও করেছেন।

নামজারি, খতিয়ান উত্তোলন, খাজনা জমাসহ নানা কাজে আসা মানুষ চান্দগাঁও ভূমি অফিসে ১১ জনের সিণ্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, এই ১১ জন হলেন তহসিলদার মো. শফিক, অফিস সহায়ক মো. এমদাদ, বাপ্পু, জহির আহমেদ, কানুনগো হায়েস আহমদ, সার্ভেয়ার পেয়ার আহমদ, মো. ফারুক আহমদ, অফিস সহকারী শোয়াইব মো. দুলু (বর্তমানে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায় কর্মরত), মো. সুজন, ঝাড়ুদার মো. খলিলুর রহমান এবং পেয়ার আহমদের সহকারী দুলু।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, টাকা ছাড়া সেখানে কোন কাজ হয় না। পদে পদে দিতে হয় টাকা। আবার ঘুষের পরিমাণ কম হলেও ভোগান্তি। ঘুষ ছাড়া কাজ করতে গেলে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। নানা অজুহাতে হয়রানি করা হয়। তবে ঘুষ দিলে নিমেষেই কাজ হয়ে যায়। কর্মকর্তারা সেবাগ্রহীতাদের প্রকাশেই বলেন, ‘টাকা দিলে কাজ হবে নয়তো ঘুরবেন। চুক্তি করেন, কাজ হয়ে যাবে।’

মোহাম্মদ হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী পৈত্রিকসূত্রে মালিকানা জায়গার নামজারি করতে ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মোট তিনবার কাগজপত্র (কেইস নং ১-৬৪/১৮) জমা দেন। প্রতিবারই মোটা অংকের ঘুষ দাবি করে ১১ জনের ওই সিণ্ডিকেট। কিন্তু ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় তার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। পরে তিনি নিরুপায় হয়ে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি আবার নামজারির জন্য কাগজপত্র জমা করেন।

এবার তিনি কাজ হওয়ার জন্য তহসিলদার শফিক ও অফিস সহকারী এমদাদকে ১০ হাজার টাকা, সার্ভেয়ার পেয়ার আহমদকে ১০ হাজার ৫০০ টাকা, কানুনগো হায়েস আহমদকে দুই হাজার এবং অফিস সহকারীকে ১৬০০ টাকা মিলিয়ে মোট ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ দেন। কিন্তু এতো টাকা ঘুষ দিলেও ভূমি কর্মকর্তার চাহিদা পূরণ না হওয়ায় কাজ হয়নি। অফিস সহকারী শোয়াইব মো. দুলু সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ফোরকান এলাহি অনুপমের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হোসেন পাঁচ হাজার টাকা দুলুকে দিলেও ‘এসিল্যান্ড মানছেন না’ বলে কাজ আটকে থাকে দীর্ঘ ১৬ মাস।

পরে অভিযোগকারী মোহাম্মদ হোসেন এসিল্যান্ড ফোরকান এলাহি অনুপমের কাছে গিয়ে ৩০ হাজার টাকা কিসের জন্য জানতে চাইলে তাকে কাঠচোর, দালাল আখ্যা দিয়ে খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তার জমির আরএস দাগ অজুহাত দেখিয়ে নামজারি খারিজ করে দেওয়া হয়।

তিনি মোহাম্মদ হোসেন নিরূপায় হয়ে চান্দগাঁও ভূমি অফিসের ১১ জনের বিরুদ্ধে গত ১৩ জুন বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দেন।

ভুক্তভোগী মো. হোসেন বলেন, ‘আমি ঘুষ না দেওয়ায় পৈত্রিক সম্পত্তির নামজারির জন্য বছরের পর বছর এখানে-ওখানে ঘুরছি। এখানে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না। তাই নিরুপায় হয়ে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেছি। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোন প্রতিকার পাইনি।’

এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অনেক আবেদন হয়। নির্দিষ্ট করে বললে সুবিধা হয়। হয়ত তদন্তে দিয়েছি অথবা তদন্ত চলছে।’

নির্দিষ্ট করে অভিযোগকারীর নাম ঠিকানা বললে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘ঠিক আছে অভিযোগকারীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি বিষয়টি দেখব।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ফোরকান এলাহি অনুপম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে জানি না। অভিযোগকারী যদি বিভাগীয় কমিশনার স্যার বরাবর অভিযোগ করেন তাহলে তা অবশ্যই তদন্ত হবে।’

সার্ভেয়ার পেয়ার আহমদ বলেন, ‘আমি কোন টাকা নেইনি। তবে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। আামাদের এসিল্যান্ড স্যারও বিষয়টি শুনেছেন। কেন অভিযোগ করেছেন তা আমি জানি না। আমি জীবনে কোন অন্যায় করিনি।

তহসিলদার শফিক আহমদ বলেন, ‘আমি অভিযোগকারীকে চিনি। তবে তার কাছ থেকে কোন টাকা নেইনি।’

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm