ওয়েস্টার্ন মেরিন ডুবে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়ায়, ২০০০ কোটির ঋণের বোঝা

ঘরের বিরোধে দেড় বছর ধরে বন্ধ শিপইয়ার্ড, উঠেছে অন্য সাইনবোর্ড

চট্টগ্রামের বুক চিরে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে পটিয়ার কোলাগাঁওয়ে নিষ্প্রাণ দাঁড়িয়ে আছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড নামের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। কিছুদিন আগেও এই শিপইয়ার্ড অন্তত তিন হাজার শ্রমিকের হুড়োহুড়ি আর ব্যস্ততায় ছিল মুখর। এখন সেখানে শুধুই নিস্তব্ধতা। জাহাজ নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে দেড় বছর আগেই। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের সেই জায়গায় এখন ঝুলছে ‘পটিয়া মেরিন শিপ বিল্ডার্স’ নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড।

মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কিভাবে আমূল বদলে গেল পুরো একটি কারখানা, দেড় হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মূদ্রা বয়ে আনা কোম্পানিটি কী করে হয়ে গেল শূন্য হস্ত— এ নিয়ে বিস্ময় রয়েছে সবখানেই।

পটিয়ার কোলাগাঁওয়ে চট্টগ্রামভিত্তিক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডটি গড়ে উঠেছিল ৪০ একর জায়গাজুড়ে— যা রীতিমতো ৩০টি ফুটবল মাঠের সমান। সেই ওয়েস্টার্ন মেরিনেরই তিন তিনটি শিপইয়ার্ড গত দেড় বছর ধরে পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

চূড়া থেকে যেভাবে নেমে এলো মাটিতে

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড কেন বিস্ময়কর গতিতে মুখ থুবড়ে পড়লো— এর নেপথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটির ভেতর পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব উঠেছিল চরমে। অন্যদিকে উচ্চ সুদে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুতই পরিণত করেছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানে। আর এখন এটিই বাস্তবতা যে, জাহাজ নির্মাণশিল্পের বিশাল সম্ভাবনা থাকার পরও ওয়েস্টার্ন মেরিন বন্ধ হওয়ার পথে কেবলই মূলধনের অভাবে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এই শীর্ষস্থানীয় জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির এখন এমনই করুণ অবস্থা যে, গত ১৩ মাস ধরে তাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না। বকেয়া এই বেতনের পরিমাণ এখন এসে দাঁড়িয়েছে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকায়। বেতনই শুধু নয়, শিপইয়ার্ডের জন্য ইজারা নেওয়া জমির ভাড়াটুকুও দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

ওয়েস্টার্ন মেরিনেরই তিন তিনটি শিপইয়ার্ড গত দেড় বছর ধরে পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
ওয়েস্টার্ন মেরিনেরই তিন তিনটি শিপইয়ার্ড গত দেড় বছর ধরে পুরোপুরি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) শিপইয়ার্ডটি ঘুরে দেখা যায়, ‘পটিয়া মেরিন শিপবিল্ডার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিনের প্রধান প্রবেশপথটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে হাজী ছাবের আহমেদ নামে এক ব্যক্তির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওয়েস্টার্ন মেরিনের শিপইয়ার্ড হিসাবে ব্যবহৃত অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ‘পটিয়া মেরিন শিপবিল্ডার্স’ নামের ওই প্রতিষ্ঠান।

একসময়ের ব্যস্ত কারখানায় কোনো শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়নি— যেখানে দেড় বছর আগেও অন্তত তিন হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। পুরো কারখানা এবং সংলগ্ন অফিসে মাত্র ১৫-২০ জন কর্মকর্তা এবং শ্রমিকের দেখা মিলেছে। এরা মূলত দাপ্তরিক সাধারণ কাজ ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়েস্টার্ন মেরিনের একজন পরিচালক বলেন, পটিয়ার কোলাগাঁওয়ে শিপইয়ার্ডের ৪০ একর জায়গার মধ্যে কোম্পানির নামে কেনা হয়েছে মাত্র ২৮ একর জমি। বাকি ১২ একর জায়গা ৩০ বছরের মেয়াদে ইজারা নেওয়া হয়। কিন্তু ১৮ মাসের ভাড়া বকেয়া পড়ে যাওয়ায় ছাবের আহমেদ নামে এক ইজারাদাতা ওয়েস্টার্ন মেরিনের জায়গায় সাইনবোর্ড গেড়ে দিয়েছেন। আরও একজন ইজারাদাতা ওয়েস্টার্ন মেরিনকে নোটিশ দিয়েছে তার জায়গাটি খালি করে দেওয়ার জন্য।

আত্মপ্রকাশ বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে

এখন থেকে ২০ বছর আগে, ২০০০ সালে দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। সেই থেকে কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের ১৫০টি জাহাজ তৈরি করেছে গত ২০ বছরে। এর মধ্যে রয়েছে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার, বন্দরের ইউটিলিটি জাহাজ, টাগবোট, কন্টেইনার জাহাজ, ট্যাঙ্কার, বাল্ক ক্যারিয়ার এবং যাত্রীবাহী জাহাজ।

অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ‘পটিয়া মেরিন শিপবিল্ডার্স’ নামের এক প্রতিষ্ঠান। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ‘পটিয়া মেরিন শিপবিল্ডার্স’ নামের এক প্রতিষ্ঠান। ছবি: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

দেশের ভেতরেই শুধু নয়, প্রতিষ্ঠার আট বছরের মাথায় ২০০৮ সাল থেকে নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক, কেনিয়া, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারতসহ ১২টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রপ্তানি করেছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। কোম্পানির ২ হাজার কোটি টাকার টার্নওভারের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রাই ছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ঘরের বিরোধে অবস্থা নাজুক

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে টানা ১৯ বছর ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বর্তমানে কোম্পানিটির সাধারণ একজন পরিচালক হিসেবে আছেন।

জানা গেছে, কোম্পানির বোর্ডসভায় এক পরিচালক অভিযোগ তোলেন, সাখাওয়াত হোসেন কোম্পানির জন্য যেমন কাজ আনতে পারছেন না, তেমনি কোম্পানির ওপর জেঁকে বসা ঋণের বোঝাও কমাতে পারছেন না। এটা ছিল মূলত পরিচালকদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের শিখামাত্র। কোম্পানির ভেতরকার এই বিরোধের জের ধরে ২০১৯ সালের জুন মাসে সাখাওয়াত হোসেন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এর পরপরই ক্যাপ্টেন (অব.) সোহেল হাসান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভার নেন।

নতুন এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবশ্য তার পরিবারের সঙ্গে সিঙ্গাপুরেই থাকেন। করোনা মহামারিতে কর্মী ও শ্রমিকরা যখন বকেয়া মজুরির দাবিতে পটিয়ায় ওয়েস্টার্ন মেরিনের ডকইয়ার্ডের সামনে বিক্ষোভে মেতে ওঠেন, তখনও সোহেল হাসান ছিলেন সিঙ্গাপুরেই।

তবে বাস্তবতা এই যে, ২০১৯ সালে সোহেল হাসান নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওয়েস্টার্ন মেরিন আর একটি জাহাজও রপ্তানি করতে পারেনি।

অন্যদিকে বর্তমানে পরিচালক হিসেবে থাকা সাখাওয়াত হোসেনের দাবি, ২০১৯ সালের জুন মাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন মেরিন জাহাজ রপ্তানিকারক হিসেবে ছিল সামনের সারিতে।

তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করার পর কোম্পানি গত দেড় বছরে একটি জাহাজও রপ্তানি করতে পারেনি। এমনকি একটি বিদেশি কোম্পানিকে সময়মতো জাহাজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা একটি মামলাও করেছে। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে।’

এক ব্যাংকের ধারের টাকায় অন্য ব্যাংকের ঋণ শোধ

জাহাজ নির্মাতারা বলছেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগের পর লাভের মুখ দেখতে অনেক সময় লাগে। ওয়েস্টার্ন মেরিন উচ্চ সুদে স্বল্পমেয়াদী ঋণ নিয়ে শিপইয়ার্ড নির্মাণসহ দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছিল।

অদক্ষ লোকবল ছাড়াও বিভিন্ন বাধার কারণে কখনও কখনও একটি জাহাজ তৈরি করতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লেগে যায়— স্বাভাবিকভাবে যা মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই নির্মাণ হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছে জাহাজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হতে পারে অথবা জাহাজগুলো বিক্রি করে দিতে হবে কম দামে।

দেখা গেছে, ওয়েস্টার্ন মেরিন জাহাজ নির্মাণ করে ঠিকই, কিন্তু প্রকল্পের জন্য নেওয়া ব্যাংক ঋণ জাহাজ বিক্রির আগেই ‘মন্দ ঋণে’ পরিণত হতে শুরু করে। এ কারণে কোম্পানিটির হাল এমন অবস্থায় দাঁড়ায় যে, একটি ব্যাংক থেকে ধার করে তারা অন্য ব্যাংকের ঋণ শোধ করছিল। কিন্তু এভাবে ঋণের পরিমাণ কমা তো দূরের, উল্টো ঋণের বোঝা আরও বাড়তে থাকে।

ওয়েস্টার্ন মেরিনের স্বতন্ত্র পরিচালক ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী অনুযোগের সুরে বলেন, অন্যান্য দেশের মতো সংস্থাটিকে মজবুত একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে সরকার সহায়তা করেনি।

১৯ ব্যাংক পাবে ২ হাজার কোটি টাকা

ওয়েস্টার্ন মেরিনকে ঋণ হিসেবে দেওয়া বিপুল অংকের টাকা নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আছে দুশ্চিন্তায়। গত দেড় বছর ধরে থমকে যাওয়া জাহাজ নির্মাণের কাজ এই দুশ্চিন্তাকে পরিণত করেছে রীতিমতো আতঙ্কে। ফলে ঋণের টাকা আদৌ আদায় করা যাবে কিনা—সেটাই এখন অনিশ্চিত।

সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে দুই হাজার কোটি টাকা পাবে ১৯টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এসব ঋণের অধিকাংশই দীর্ঘমেয়াদে পুনর্গঠন ও রি-শিডিউলিং করা হয়েছে। যদিও এই ঋণের একটি অংশ আবার মন্দ ঋণ হিসেবে ক্লাসিফায়েড করা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, ওয়েস্টার্ন মেরিন শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ৭২১ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া থেকে নিয়েছে ৪৪৮ কোটি টাকা। এই কোম্পানিটির কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক পাবে ১১৭ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১১১ কোটি টাকা, এনসিসি ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৭২ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ৬৩ কোটি টাকা এবং ওয়ান ব্যাংক পাবে ৫৩ কোটি টাকা।

অন্যদিকে তুলনামূলক ছোট অংক হলেও পূবালী ব্যাংক পাবে ৫ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে কোম্পানিটির কাছ থেকে।

এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাইডাস ফিনান্স ওয়েস্টার্ন মেরিন থেকে পাবে ৪৫ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ৩৬ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স ৩২ কোটি টাকা, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ২২ কোটি টাকা, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট ১৭ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স ১৩ কোটি টাকা, উত্তরা ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্ট ১১ কোটি টাকা, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ও ইনভেস্টমেন্টের পাওনা ২ কোটি টাকা।

ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছেই শুধু নয়, ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে টাকা পাবে জাহাজ ব্যবসায়ীদের অনেকেও। এই অংক কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক মেরিনের মালিক নাসির উদ্দিন পাবেন ৮০ লাখ টাকা। অন্যদিকে দেশ শিপবিল্ডিংয়ের মালিক মোহাম্মদ সারওয়ার পাবেন আড়াই কোটি টাকা। এই শিল্পের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের (প্রত্যাখ্যাত) একাধিক মামলা দায়ের করেছেন।

ঘরের বিরোধই শেষ করেছে

ব্যাংক এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জোনাল হেড একেএম সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ওয়েস্টার্ন মেরিন ব্যাংক ঋণ নিয়ে জাহাজ নির্মাণ করে মুনাফা করেছে। কিন্তু তারা সময়মত ব্যাংক পরিশোধ করেনি। কোম্পানিটির ঘাড়ে এখন অসংখ্য ঋণের বোঝা।

সোনালী ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মনির হোসেন বলেন, শুরুতে ওয়েস্টার্ন মেরিনের ভালো ব্যবসায়িক সম্ভাবনা দেখেই তারা কোম্পানিটিকে ঋণ দিয়েছিলেন।

মনির হোসেন বলেন, সম্প্রতি কোম্পানিটি তার পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ বিবাদের শিকার হয়েছে। এছাড়া অব্যবস্থাপনার কারণে বিপর্যস্ত ওয়েস্টার্ন মেরিন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন কোনো জাহাজ নির্মাণ করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা তাদের ঋণ পরিশোধেও ভালোভাবেই প্রভাব ফেলেছে।

৮ জাহাজের কী হবে?

দেশ ও বিদেশের জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিনের হাতে এখনও রয়েছে আটটি জাহাজ সরবরাহের কার্যাদেশ। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশনের একটি যাত্রীবাহী জাহাজ, এস আলম গ্রুপের পণ্যবাহী জাহাজ এভারগ্রিন, চট্টগ্রাম বন্দর ও পায়রা বন্দরের জন্য দুটি টাগবোট এবং সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ। কিন্তু যেহেতু গত দেড় বছর ধরে কোম্পানিটি কার্যত বন্ধ, সেজন্য এসব জাহাজ আদৌ আর সরবরাহ করা যাবে না বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। এর ওপর কোম্পানিটি নতুন করে কোনো কাজও আর পায়নি।

২০২০ সালের জুন মাসে অগ্রিম টাকা নিয়েও সময়মতো জাহাজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুবাইভিত্তিক আল রশিদ শিপিং লিমিটেড হাইকোর্টে ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।

তবু আশার বাণী

যোগাযোগ করা হলে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) সোহেল হাসান বলেন, দুটি জাহাজ সরবরাহে দেরি হয়েছে, কারণ তাদের বিদেশি কর্মীরা করোনা মহামারীর কারণে শিপইয়ার্ডে ফিরতে পারেনি।

তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারিতে লকডাউনের সময়ও শ্রমিক বেতন দিতে হয়েছে এবং কারখানার ইউটিলিটি বিলও পরিশোধ করতে হয়েছে— সেজন্য আমরা এখন আর্থিক চাপে পড়ে গিয়েছি। তবে আমরা খুব তাড়াতাড়ি এই সংকট কাটিয়ে আসার ব্যাপারে আশাবাদী।’

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!